হত্যার পর মরদেহ বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে যায় হত্যাকারীরা। কয়েকদিন পর পুলিশ উদ্ধার করে। অর্ধগলিত মরদেহটি দাফনও করা হয়। নিহতের পরিবারের মামলায় ৪০ দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হb অভিযুক্ত এক যুবক। মামলাটি চলমান থাকাকালীন সময়েই মরদেহ দাফনের ছয় মাস পর বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে স্বামী নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন ববি খাতুন। এনিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল চৌকা গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, তরুণী ববি খাতুন (২৫) হত্যা মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলার এনামুল হকের ছেলে রুবেল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেও তার বিরুদ্ধে মামলা এখনও চলমান। এরমধ্যেই হঠাৎ খড়িয়াল চৌকা গ্রামে নিজ বাড়িতে জীবিত ফিরে এসেছেন তরুণী ববি খাতুন। তাকে জীবিত দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘেরাও করে মামলায় জেলে থাকা যুবকের পরিবার ও স্বজনরা।
ভুক্তভোগী আসামি রুবেল আলী বলেন, আমি আমার এক বন্ধুর কাছে টাকা পেতাম ৩০ হাজার। এজন্য ৬ মাস আগে আমি তাকে রাস্তায় আটক করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সে চলে গেলেও তার মুঠোফোনটি আমার কাছে রয়ে যায়। কয়েকদিন পর ববি খাতুন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, সে যুবক তার স্বামী। আমি যেন মুঠোফোনটি তার কাছে গিয়ে দিয়ে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমি ববি খাতুনের বাড়িতে গিয়ে মুঠোফোনটি দিয়ে এসেছি। এটি ছিল আমার বড় ভুল। পরে ববি খাতুন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হলে। আমার ওপর চাপ আসে। আমি নাকি তাকে লুকিয়ে রেখেছি। তার তিনদিন পরে আমি জানতে পারি সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের লিলিখিলি মোড়ের একটি পুকুর থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত এই নারীর গায়ে থাকা স্বর্ণের অলংকার দেখে ববিকে চিহ্নিত করে তার পরিবার। পূর্ববর্তীতে পুলিশের উপস্থিতিতে জেলা শহরের ফকিরপাড়া গোরস্তানে তার মরদেহটি দাফন করা হয়। আমি নাকি ববিকে হত্যা করে পুকুরে ডুবিয়ে রেখেছিলাম। এই অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন আমাকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে তিন দিন আটকে রেখে নির্যাতন করেন। এতে আমার শরীরের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরে আমাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ৪০ দিন জেল হাজতে থেকে এখন আমি জামিনে মুক্ত আছি। কিন্তু মামলা এখনও চলছে।
রুবেল আলীর বাবা এনামুল হক বলেন, আমার ছেলে কাউকে হত্যা করতে পারে এটি আমার বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু কি করব কাগজপত্রে তো তাই প্রমাণ করে। এজন্য আমার ছেলেকে প্রায় ৪০ দিন জেল হাজতেও থাকতে হয়েছে। কিন্তু এখন জানতে পারছি ববি খাতুন নামের ওই মেয়ে মারা যায়নি। বরং তিনি ঢাকায় ছিলেন। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরে এসেছেন। এ ঘটনা শুনে অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করছি। কিন্তু আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। আর আমার প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা খরচও হয়েছে। আর মান-সম্মান তো নষ্ট হয়েছেই। এলাকার মানুষ আমরাকে অন্য নজরে দেখত। এ ঘটনায় আমরা এখন সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে ববি খাতুনের দাবি, তাকে ঘটনার কয়েকদিন আগে রুবেল আলী ও বিপ্লব বাড়ি থেকে মুঠোফোনে মনাকষা এলাকায় ডেকে জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে নঁওগা জেলায় ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পরে তাকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে।
ববি খাতুন বলেন, এসব ঘটনার পর আমার সঙ্গে পরিচয় হয় নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মাজেদ আলী নামে এক যুবকের সঙ্গে। পরে আমরা দুইজন বিয়ে করে এতদিন ঢাকায় ছিলাম। কাল বাড়িতে ফিরেছি। তবে এসময়ের মধ্যে আমি বাড়িতে যোগাযোগ করিনি।
তিনি আরও বলেন, বিপ্লব ও রুবেলকে আমি ছাড়ব না। তারা আমাকে নির্যাতন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করব।
পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে হত্যা দায়ের করে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করা হয়েছে দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. কাজল ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রউফ বলেন, নিখোঁজের পর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এরপরই আসামি পক্ষ ও ববি খাতুনের পরিবারকে নিয়ে সমাধানে বসলে তা ব্যর্থ হয়। আমরা বুধবার বিকেলের আগ পর্যন্ত জানতাম, ববি খাতুন মৃত। কিন্তু হঠাৎ তার জীবিত অবস্থায় ফিরে আসায় অবাক হয়েছি। তবে স্বস্তি পেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান বলেন, পুলিশ বস্তাবন্দি মরদেহটি উদ্ধার করলে, ববি খাতুনের পরিবার দাবি করে মরদেহটি তাদেরই। তারপর পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দুজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া রুবেল নামে আরও এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। সে এখন জামিনে আছেন। এ বিষয়ে তদন্তকাজ শুরু করেছে পুলিশ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.