ব্রাজিল বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানিতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (৪৯৫ টাকা) বাংলাদেশকে দিতে চায় লাতিন আমেরিকার এই দেশটি।
কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে, রোববার (৭ এপ্রিল) ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। তখন বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
২০২৩ সালে বিশ্বের ১২৬টি দেশে গরুর মাংস রপ্তানি করেছিল ব্রাজিল। গত বছর ব্রাজিল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ।
ঢাকা ও ব্রাজিলের কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, মাউরো ভিয়েরার সফরকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।
এ সময় তিনি গরুর মাংস রপ্তানির বিষয়টি আলোচনায় তুলেছেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে সে দেশের গরুর মাংস রপ্তানিকারক সমিতির একাধিক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
দুই দিনের সফরে ঢাকা এসে রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন মাউরো ভিয়েরা। সোমবার (৮ এপ্রিল) তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এই প্রথম ব্রাজিলের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত মঙ্গলবার তার দপ্তরে সাংবাদিকদের সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ব্রাজিল থেকে আমরা ভোজ্যতেল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করি। দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের রপ্তানি অনেকটাই এখনো আন–এক্সপ্লোরড রয়ে গেছে। ব্রাজিল বড় দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বেশি। ফলে তাদের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর কারিগরি সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি ও ক্রীড়া খাতে সহযোগিতা, বিশেষ করে ফুটবলের বিকাশে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিষয়ে ব্রাজিল এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৮টি দেশের সঙ্গে একটি রূপরেখা চুক্তি সই করেছে। এবারের সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতার ওই রূপরেখা চুক্তি সই হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চুক্তিতে কোন কোন খাতে সহযোগিতা হবে, তা চিহ্নিত করা হবে। পরে নির্দিষ্ট খাতের আওতায় প্রকল্প নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের কারিগরি সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তিতে রয়েছে কৃষি, জ্বালানি, পানিসম্পদ, বনায়ন, শিক্ষ ও মৎস্যসম্পদ খাত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ই মূলত প্রাধান্য পাবে। ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য তিন বছরের মধ্যে ১৫০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে এ মুহূর্তে ২৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ভোজ্যতেল, চিনি ও তুলার আমদানিতে অধিকাংশ ব্যয় হয়েছে। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এ সফরে ইথানল রপ্তানি, তুলার রপ্তানি বাড়ানো, পোলট্রি ও ফিশ ফিড ও গরুর মাংস রপ্তানির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওষুধ ও তৈরি পোশাক রপ্তানি, ইথানল আমদানি বা দেশে ইথানল উৎপাদনে সহায়তা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও সামুদ্রিক পর্যটনে সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.