মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা কৃষি অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত এক গুচ্ছ ধান নিয়ে পরামর্শের জন্য গেলে কৃষক ফজলুর রহমানকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় অভিুযক্ত সেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন সুজনকে মানিকগঞ্জে থেকে দিনাজপুর অঞ্চলে বদলির পর এবার উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিয়া তরফদারকেও ফরিদপুরের সালথায় বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে ১০ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস আদেশ কপিতে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন সুজনকে দিনাজপুর অঞ্চলের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিলের মধ্য তিনি দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন, অন্যথায় ৪ এপ্রিল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিস) বলে গণ্য করা হবে।
অপরদিকে, কৃষি অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশ থেকে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা থেকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পদায়ন করে বদলি করা হয়েছে। ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৬ এপ্রিল তিনি তার দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন। অন্যথায় ১৭ এপ্রিল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্তি বলে গণ্য হবে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) শিবালয় উপজেলা কৃষি অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত একগুচ্ছ ধান নিয়ে পরামর্শ নিতে যান কৃষক ফজলুর রহমান। কৃষি অফিসে দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা ওই কৃষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা এবং কৃষককে কৃষি অফিস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে তাদের নির্দেশে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক(উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. শহিদুল আমিন এবং অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মো. মামুন ইয়াকুবকে নিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবিআহ নূর আহমেদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে শিবালয় উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার আরেকটি অফিস আদেশে উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিয়া তরফদারকেও ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বোরো খেতে পোকার আক্রমণ হওয়ায় মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের কৃষক ফজুলুর রহমান পরামর্শের জন্য এক গুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে কৃষি অফিসে যান। এসময় তিনি ধান গুলো ছবি তোলার কথা বলেন এবং জেলার উপ-পরিচালকের ফোন নম্বর চান। একই সাথে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে যান না বলে অভিযোগ করলে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজন। পরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওই কৃষককে বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দেই। আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে। যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে দিতাম। এক পর্যায়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা জানার পর দুই সাংবাদিক ভুক্তভোগী কৃষককে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিয়া তরফদারের কাছে গেলে তাদের সামনেই কৃষকের সাথে খারাপ আচরণ করেন ওই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিয়া তরফদার।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.