নিপাহ ভাইরাস (Nipah Virus) একটি বিপজ্জনক ভাইরাস যা প্রাণীদের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে। এটি সাধারণত বাদুড়, শুকর বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বাহকের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে, এবং এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
এখানে নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতামূলক কিছু তথ্য দেওয়া হলো:
১. নিপাহ ভাইরাস কী?
নিপাহ ভাইরাস একটি উঁচু সংক্রমণ ক্ষমতার ভাইরাস যা সাধারণত বাদুড়, শুকর এবং অন্যান্য প্রাণী দ্বারা পরিবহন হয়। ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে স্নায়ু সংক্রমণ (এনসেফালাইটিস) সৃষ্টি করতে পারে। এটি মারাত্মক হতে পারে এবং ৪০%-৭০% পর্যন্ত মৃত্যুর হার থাকতে পারে।
২. নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যেমন:
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- গলাব্যথা
- শরীরে অস্বস্তি
- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা
- বমি বা ক্ষুধামন্দা
- মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস) হতে পারে, যার ফলে অবচেতনতা, অবস্থা বিপর্যস্ত হওয়া, এবং কোমায় চলে যাওয়া।
৩. সংক্রমণের পথ
- বাদুড়ের মাধ্যমে: বাদুড় থেকে ফসল, ফল, বা অন্য খাবারে ভাইরাস প্রবাহিত হতে পারে, বিশেষ করে যেসব ফলের সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয়।
- শুকর থেকে: শুকরের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, কারণ শুকরের শরীরে এই ভাইরাস থাকতে পারে।
- মানব থেকে মানব: আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের তরল থেকে (যেমন: থুতু, কাশি) নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪. নিরাপদ থাকার উপায়
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ এড়িয়ে চলার জন্য কিছু সচেতনতা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ:
- বাদুড় বা শুকরের সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- পাকা ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, বিশেষ করে যেগুলি বাদুড় বা অন্যান্য প্রাণীর কাছ থেকে আসতে পারে।
- যেসব অঞ্চলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, সেখানে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং যেসব ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলা উচিত।
- স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার সময়।
৫. চিকিৎসা
নিপাহ ভাইরাসের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষ চিকিৎসা বা টিকা নেই। সাধারণত চিকিৎসা সমর্থনমূলক ব্যবস্থা (যেমন, তরল দেওয়া, শ্বাসকষ্টের জন্য সহায়তা) দিয়ে রোগীর অবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করা হয়। যেহেতু এটি একটি ভাইরাল রোগ, এন্টিভাইরাল ওষুধও কার্যকর নাও হতে পারে।
৬. নিপাহ ভাইরাসের প্রতিরোধ
এখনো পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের জন্য কার্যকর কোনো টিকা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয়নি। তবে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দ্রুত শনাক্তকরণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।
৭. স্বাস্থ্যকর্মী এবং কমিউনিটি সচেতনতা
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং কমিউনিটিকে নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ, চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। বিশেষত, স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
৮. সর্বশেষ পরামর্শ
যদি আপনি বা আপনার আশপাশে কোনো ব্যক্তি নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ দেখেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা এড়িয়ে চলুন এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
নিপাহ ভাইরাস অত্যন্ত বিপজ্জনক, কিন্তু সচেতনতা, সতর্কতা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া এর প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
রাজধানীর মহাখালীতে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে নিপাহ ভাইরাসবিষয়ক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে আইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন জানান,চলতি বছরে নিপাহ ভাইরাসে চার জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের দুজন শিশু, তিনজন পুরুষ। শিশুদের একজন মেয়ে ও একজন ছেলে। মৃত দুজনের বয়স ৩৮ বছর, মেয়ে শিশুটির বয়স ৩ বছর, আরেক শিশুর বয়স ৬ বছর, একজনের বয়স ২৫ বছর।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.