২৫ মার্চের ভয়াবহতা জাতির ইতিহাসে এক বিভীষিকা

ইস্রাফিল হাওলাদার

ভয়াল কাল রাত ২৫ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নৃশংস ও শোকাবহ রাত। এই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার রাস্তায় গণহত্যা ও নির্যাতন চালায়, যা পরবর্তীতে “২৫ মার্চের গণহত্যা” নামে পরিচিতি লাভ করে। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক আকারে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর হামলা চালায়, অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে। যা বাঙালি জাতির ভয়াবহতা ইতিহাসের এক বিভীষিকা।

Islami Bank

আরও পড়ুন…জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা চেয়েছে ১০০ কোটি ডলার

এদিন ঢাকায় শুরু হওয়া এই অভিযানকে “অপারেশন সার্চলাইট” বলা হয়, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর, আতিকুল ইসলাম সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বাঙালি জাতির উপর আক্রমণ চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষ শহীদ হন এবং অগণিত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্মান্তিক অধ্যায়, যেটি আমাদের জাতিগত সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের চিত্র বহন করে। ২৫ মার্চের সেই রাতটি বাঙালি জাতির স্মৃতিতে চিরকাল থাকবে।

ভয়াল কাল রাত ২৫ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নৃশংস ও শোকাবহ রাত। এই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার রাস্তায় গণহত্যা ও নির্যাতন চালায়, যা পরবর্তীতে “২৫ মার্চের গণহত্যা” নামে পরিচিতি লাভ করে। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক আকারে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর হামলা চালায়, অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে।

জাতির ইতিহাসে এক বিভীষিকা
আর্কাইভ ছবি

এদিন ঢাকায় শুরু হওয়া এই অভিযানকে “অপারেশন সার্চলাইট” বলা হয়, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর, আতিকুল ইসলাম সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বাঙালি জাতির উপর আক্রমণ চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষ শহীদ হন এবং অগণিত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্মান্তিক অধ্যায়, যেটি আমাদের জাতিগত সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের চিত্র বহন করে। ২৫ মার্চের সেই রাতটি আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল থাকবে।

২৫ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। এই দিনটি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগের এক গভীর ট্র্যাজেডি, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” নামে একটি ভয়ংকর অভিযান চালায়।

প্রেক্ষাপট:
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে, বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতার দাবি জোরালো হতে থাকে। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

এদিকে, পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেবার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছিল না। পরবর্তীতে, ২৫ মার্চ রাতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে, যা ছিল তাদের বর্বর ও নির্মম অভিযান।

অপারেশন সার্চলাইট:
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। পাকিস্তান সরকার ভেবেছিল, তারা এই অভিযান চালিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। তাদের লক্ষ্য ছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং বাঙালি জনগণের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানো।

one pherma

১. ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় হামলা: পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাল্টন, বাঙালি সম্প্রদায়ের জনবহুল এলাকা, সেগুনবাগিচা, মিরপুর এবং অন্যান্য স্থানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আক্রমণ চালায়। ছাত্র-শিক্ষকসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে শহীদ মিনারের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতে গুলি চালানো হয়। সেখানে শত শত ছাত্র-ছাত্রী নিহত হন।

আরও পড়ুন…পরিবর্তন করা হলো যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ইস্যুতে

সেনাদের বর্বরতা: পাকিস্তানি সেনারা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। নিরীহ মানুষের ওপর এদের আক্রমণ ছিল একেবারে অমানবিক। সেসময়, গুলির শব্দ, মানুষগুলোর চিৎকার ও আগুনের শিখা প্রতিটি ঘর, প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি এলাকার এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য সৃষ্টি করেছিল।

অন্য শহর ও গ্রামে হামলা: ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ও অন্যান্য শহর ও গ্রামে একই ধরনের নৃশংসতা চালানো হয়। যে সব শহরের ও অঞ্চলের জনগণ পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, সেখানে সেনারা ব্যাপক আক্রমণ চালায়।

হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ নিহত: এই রাতে সঠিক নিহতের সংখ্যা নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে, তবে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, এক রাতেই হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার থেকে দশ হাজারের মধ্যে হতে পারে। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্যাতন চালানোর পর, অনেক লাশ সৎকার করা সম্ভব হয়নি, এবং পরে হত্যার সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে।

শহীদদের স্মৃতি: ২৫ মার্চের রাতে নিহত হওয়া মানুষের স্মৃতি আজও জাতির হৃদয়ে তাজা। হাজার হাজার মা, বোন, ভাই, বাবা, বন্ধু, শিক্ষার্থী, কর্মী – সবাই ছিলেন এই গণহত্যার শিকার। এ হত্যাকাণ্ড শুধু যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিল তা নয়, এটা বাংলাদেশের জাতিগত ঐক্যের এক অগ্নিপরীক্ষাও ছিল।

পরিণতি:
২৫ মার্চের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও আক্রমণ চালাতে থাকে, তবে বাঙালিরা থেমে না থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তারপর শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যা ৯ মাস ধরে চলতে থাকে এবং অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
বিশ্বব্যাপী ২৫ মার্চের গণহত্যার ব্যাপারে কোনো বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া না থাকলেও, পরে অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানায়। তবে পাকিস্তান সরকার কখনো এই গণহত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি বা দায় স্বীকার করেনি।

স্মৃতিচিহ্ন:
২৫ মার্চের এই দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিভিন্ন শহরে স্মৃতিসৌধ, মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোচনা সভা, এবং এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় নিহতদের স্মৃতিতে। ২৫ মার্চের রাতের সেই ভয়াবহতা জাতির ইতিহাসের এক বিভীষিকা, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতা এবং জাতীয় ঐক্যের গুরুত্বকে চিরকাল স্মরণ করিয়ে দেয়।

এই গণহত্যার মাধ্যমে ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এবং এটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের এক চিরস্থায়ী স্মৃতি।

ইবাংলা/বা এ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us