এ যেন কেচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার অবস্থা। বোট ক্লাবের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে হালের সবচেয়ে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির বিলাসবহুল জীবনযাপনের নানা ঘটনা এখন ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে।
চলচ্চিত্রে সাফল্যহীন এ নায়িকা কিভাবে এত ধন-সম্পদের মালিক হলেন, তা নিয়ে নানা খবর এখন বের হচ্ছে। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনেরও নানা ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। অভিজাত এলাকা বনানী একটি বাড়ির পাঁচতলার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করেন পরীমনি।
এই বিলাসবহুল এ ফ্ল্যাটের দাম দশ কোটি টাকারও অধিক বলে অনেকে বলছেন। এ ফ্ল্যাট পরীমনি কিভাবে কিনলেন এবং কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে চড়েন।
কারণ, চলচ্চিত্রে তিনি যে কয়টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং যেগুলো মুক্তি পেয়েছে সবগুলোতে তার অভিনয়ের পারিশ্রমিক মিলিয়েও তার গাড়ির মূল্যের সমান হবে না, ফ্ল্যাট কেনা অনেক পরের কথা।
প্রায় অর্ধযুগের ক্যারিয়ারে এমন আলিশান ফ্ল্যাট ও গাড়িতে চড়ার কথা চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় অনেক নায়ক-নায়িকার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। ফলে চলচ্চিত্রাঙ্গণের লোকজনের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, পরীমনি কিভাবে এত ধন-সম্পদের মালিক হলেন।
এসব প্রশ্নের উত্তরে একটি কথায়ই তারা বলছেন, সমাজের উপরতলার প্রভাবশালী মহলে পরীমনির অবাধ যাতায়াত এবং সম্পর্কের কারণে এত টাকার মালিক হয়েছেন। নায়িকা হয়ে তা করা সম্ভব নয়। তিনি যদি সুপারহিট সিনেমার নায়িকাও হতেন, তাহলেও ছয় বছরে এত সম্পদের মালিক হতে পারতেন না।
প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পরীমনি বেপরোয়া জীবনযাপন করা শুরু করেন। তার ফ্ল্যাটে রয়েছে আলাদা মদের বার। যেখানে বিশ্বের নামিদামী ব্র্যান্ডের মদ সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে বিশ্বের কোনো দামী মদের বারে ঢুকে পড়েছি।
গত ১৩ জুন রাতে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমনি। এ সময় পরীমনির মদের বার অনেক সাংবাদিকের চোখে পড়ে। একজন নায়িকার বাসায় মদের বার দেখে তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, পরীমনি দলবল নিয়ে রাতের বেলা অভিজাত পাড়ার বিভিন্ন ক্লাব ও বারে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ উঠেছে। ছয় মাস আগে বনানী ক্লাবে গিয়ে ভাংচুর করার পর গত ৮ জুন রাতে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবেও ভাংচুর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনি কান্ডের পর বেশ কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে পুলিশ। নিয়ম ভেঙে কয়েকটি ক্লাবে মধ্যরাতে পরীমনির যাতায়াত এবং মদ পানের খোঁজখবর করছে বলে জানা যায়।
এরই মধ্যে বনানী থানা পুলিশ গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবের বার বয়ের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি অভিজাত ক্লাবের কর্মকর্তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, মধ্যরাতে নিয়ম ভেঙে পরীমনির জন্য বার খোলা রাখতে হয়।
তারা পুলিশকে বলছেন, মদের আসর বসানোর গল্পও। ঢাকার একাধিক সোশাল ক্লাবের কর্মকর্তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তারা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, পরীমনি তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিসহ কয়েকজন তরুণ-তরুণী নিয়ে প্রায় রাতেই অভিজাত ক্লাব ও তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়াতেন।
তাদের সঙ্গে নিয়ে মদ পান করতেন মধ্য রাত পর্যন্ত। এক্ষেত্রে প্রায় রাতেই তার কারণে ক্লাবের আইন ভাঙা হতো।
গুলশান পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৩ জুন রাত ১২টার পর পরীমনি তার সাবেক প্রেমিক এক বিনোদন সাংবাদিক এবং দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের দুই জন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারীকে নিয়ে গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবে যান।
তখন তারা মদ্যপ ছিলেন। ক্লাবে ঢুকে পরীমনি ও অন্যরা বার ব্যবহার করতে চান। বার বয় জালাল এতে অসম্মতি জানালে পরীমনি তার গালে চড় মারেন। ক্লাব কর্মকর্তারা বেসামাল আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি নিজেই পুলিশে কল করেন।
গুলশান থানা পুলিশের দুটি পিকআপভ্যান সেখানে যায়। পরে তারা বুঝিয়ে পরীমনিকে বাসায় পাঠান। ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজেও ক্লাবে তাদের প্রবেশের দৃশ্য দেখা যায়।
বনানীর একজন ব্যবসায়ী জানান, পরীমনি কথায় কথায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করেন। সেলিব্রেটি হওয়ায় পুলিশও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে মজা পায়। গায়ে দামি পারফিউম মেখে বিলাসবহুল গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো পরীর মুখে মদের গন্ধ থাকলেও কেউ তাকে আটকাতে সাহস করেন না।
গাড়ির বহর নিয়ে ছুটে চলা পরীমনি দলবল নিয়ে ক্লাবের বারে ঢুকে দামি বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতল হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগের দাবি করেন পুলিশ। তার সঙ্গের লোকজন বারের বিল পরিশোধ করেন বলে জানা যায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের সব অভিজাত ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের রেফারেন্সে তিনি সেখানে যাতায়াত করেন। তারকা হোটেলের বারেও তার যাতায়াতের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ই বাংলা/ আই/ ২২ জুন, ২০২১