নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিবের জলবায়ু বিষয়ক সাংবাদিক সম্মেলন

ইস্রাফিল হাওলাদার

মহাসচিব:
মিডিয়ার সদস্যগণ,
সর্বপ্রথমে আমি তুরস্ক সরকারের প্রতি এবং সেখানকার জনগণের প্রতি এই কঠিন সময়ে আমার পূর্ণ সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

Islami Bank

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা এবং আমি কিছুক্ষণ আগে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বৈঠক শেষ করেছি, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তন এবং ন্যায্য উত্তরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই বৈঠকে ১৭টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নিয়েছেন, যারা বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করেন — যেমন চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন — এবং এমন দেশগুলোর প্রতিনিধি ছিলেন যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

আমরা আফ্রিকান ইউনিয়ন, আসিয়ান, ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র জোট (AOSIS), এবং ক্যারিকমসহ গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক জোটগুলোর নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি পেয়েছি।এটি ছিল সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু নিয়ে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠক।

তবুও আমি একটি অভিন্ন বার্তা শুনেছি:হ্যাঁ, আমাদের বিশ্ব এখন বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং নানান সংকটে জর্জরিত।কিন্তু আমরা জলবায়ু প্রতিশ্রুতিগুলোকে পথে থেকে বিচ্যুত হতে দিতে পারি না।COP30 (ব্রাজিলে) যেন একটি সফল সম্মেলন হয়, সেজন্য আমাদের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে — এবং আজকের বৈঠক সেই প্রয়াসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
আমাদের হাতে সময় নেই।বিশ্বের কোনো অঞ্চলই জলবায়ু বিপর্যয়ের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

এই সংকট দারিদ্র্যকে বাড়াচ্ছে, জনগণকে উদ্বাস্তু করছে এবং সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।তবে, এখন দেশগুলো একটি বাস্তবতা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে:নবায়নযোগ্য জ্বালানি এই শতকের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সুযোগ।

বিরোধীরা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির স্বার্থ সংশ্লিষ্টরা হয়ত বাধা দিতে চাইবে।কিন্তু আজ আমরা যা শুনেছি তা হলো — বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। পূর্ণ গতি নিয়ে।কোনো গোষ্ঠী বা সরকারই এখন আর পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিপ্লবকে থামাতে পারবে না।

আরও পড়ুন…সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে

বিজ্ঞান আমাদের পাশে আছে — এবং অর্থনৈতিক হিসাবও পাল্টে গেছে।নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাম দ্রুত কমেছে এবং এই খাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে — কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে।

জলবায়ু বিপর্যয় থেকে মুক্তির পথ নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই।এগুলো শক্তির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার সবচেয়ে নিশ্চিত পথ — এবং ব্যয়বহুল ও অনির্ভরযোগ্য জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা শেষ করার উপায়।আমরা জানি, সম্মিলিত জলবায়ু পদক্ষেপ কাজ করে।

প্যারিস চুক্তি গ্রহণের পর থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমেছে — এই শতকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২.৬ ডিগ্রিতে, যদি বর্তমান জাতীয় পরিকল্পনাগুলো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়।

তবে সেটিও ভয়াবহ, তাই আমাদের আরও এগোতে হবে এবং আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।আজ আমি দুইটি বিষয়ে নেতাদের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।প্রথমত — COP30-এর অনেক আগেই যেন দেশগুলো তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী জলবায়ু পরিকল্পনাগুলো উপস্থাপন করে।

এবং আজ নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা যত দ্রুত সম্ভব উচ্চাভিলাষী ও দৃঢ় পরিকল্পনা দেবে — যা একটি আশাব্যঞ্জক বার্তা।এই নতুন জলবায়ু পরিকল্পনাগুলো আগামী দশকে একটি ন্যায্য ও সবুজ উত্তরণের সাহসী রূপরেখা দেবে।

one pherma

এগুলো ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অনুযায়ী হতে হবে এবং সমস্ত গ্রীনহাউস গ্যাস ও অর্থনীতির সব খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে — যেমনটি অনেকেই আজ স্পষ্টভাবে বলেছেন।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই পরিকল্পনাগুলো যেন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরকে দ্রুততর করে…

জাতীয় জ্বালানি ও উন্নয়ন কৌশলকে জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর সাথে সংযুক্ত করে…এবং নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীদের কাছে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নিট-শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জনের একটি সুস্পষ্ট সংকেত দেয়।

দ্বিতীয়ত — নেতারা যেন তাদের নিজেদের রূপান্তর ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা বৃদ্ধি করেন।যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে কম দায়ী, তারা এর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাবের শিকার।

আফ্রিকা ও অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলো দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে — এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলো দ্রুত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে — যদিও বৈশ্বিক গড় বৃদ্ধি নিজেও বাড়ছে।অন্যদিকে, বিশ্বে ৬০% সেরা সৌর সম্পদ আফ্রিকায় থাকলেও, সেখানে মাত্র ১.৫% সৌর শক্তি স্থাপন করা হয়েছে — এবং তারা নবায়নযোগ্য খাতে মাত্র ২% বৈশ্বিক বিনিয়োগ পাচ্ছে।

এই বাস্তবতা বদলাতে হবে — দ্রুত।COP30-এ নেতাদের অবশ্যই একটি বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে যাতে ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতি বছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা জোগান দেওয়া যায়।

উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করে প্রতি বছর অন্তত ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।এবং আমাদের প্রয়োজন “ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল”-এ যথেষ্ট অবদান এবং নতুন অর্থায়নের উৎস।

এই সব খাতে আমরা চাপ অব্যাহত রাখব — সেপ্টেম্বরের এক বিশেষ ইভেন্টসহ, COP30-এর আগের শেষ সপ্তাহগুলোতে।আজকের বৈঠক স্পষ্ট করে দিয়েছে — আমরা জলবায়ু কর্মে হাল ছাড়তে পারি না, ছাড়ব না, এবং কখনও ছাড়ব না।

ধন্যবাদ।

প্রশ্ন: ধন্যবাদ মহাসচিব; আমি অ্যামেলি বোতেলিয়ে, AFP সংবাদ সংস্থা থেকে। আপনি বলেছেন, কোনো গোষ্ঠী বা সরকার পরিচ্ছন্ন জ্বালানির বিপ্লব থামাতে পারবে না। আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট দেশের কথা বলেছেন — বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র? এবং আপনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কী বার্তা দিতে চান, যিনি বলেছেন তিনি আরও জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন করতে চান?

মহাসচিব: যুক্তরাষ্ট্র একটি বাজারভিত্তিক অর্থনীতি। সেখানকার সরকার নির্ধারণ করে না যে কতটা জীবাশ্ম জ্বালানি বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদিত হবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে, যেহেতু অর্থনৈতিক দিক থেকে পরিষ্কার — নবায়নযোগ্য জ্বালানির খরচ জীবাশ্ম জ্বালনির চেয়ে কম। আমরা দেখি যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি খাত খুব সক্রিয় — এবং অনেক অঙ্গরাজ্য সরকারও একই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রকে একটি জটিল সমাজ হিসেবে দেখতে হবে — শুধুমাত্র দেশটির নেতাদের অবস্থানের ভিত্তিতে নয়।

প্রশ্ন: বোম দিয়া, মহাসচিব; আমি ফেলিপে, টিভি গ্লোবো ব্রাজিল থেকে। আমি জানতে চাই চীন কি এই বৈঠকে অংশ নিয়েছিল? এবং এমন কোনো অগ্রগতি কি হয়েছে যা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে যে দেশগুলো সেপ্টেম্বরের আগেই তাদের NDC জমা দেবে?

মহাসচিব: হ্যাঁ, চীন এই বৈঠকে অংশ নিয়েছে। এবং চীন শুধু ঘোষণা দেয়নি যে তারা NDC (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) জমা দেবে, বরং প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন সেই পরিকল্পনাগুলো দেশের সব অর্থনৈতিক খাত এবং সব ধরনের গ্রীনহাউস গ্যাসকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এটি প্রথমবারের মতো চীন এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছে — এবং এটি জলবায়ু পদক্ষেপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধন্যবাদ।

ইবাংলা/ ইস্রাফিল হাওলাদার

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us