এক দশক আগে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পর্যটকেরা। শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার রোধে কাস্টমস ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে গাড়ি খালাসের শর্ত দিলে গাড়ি নেননি পর্যটকেরা। গত ৩ থেকে ৪ নভেম্বর অনলাইনে ও দেশের ৫টি নির্ধারিত স্থানে এসব গাড়ির পঞ্চম নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।
কাস্টম হাউসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৫ নভেম্বর) প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। নিলামে ১১২টি গাড়ি তোলা হলেও ২টি গাড়ি কেনার জন্য কেউ দর জমা দেননি।
১১ বছর ধরে বন্দরে পড়ে থাকা এসব গাড়ির অনেক পার্টস নষ্ট হয়ে গেছে। পাওয়া যাচ্ছে না কিছু গাড়ির চাবিও। এসব দেখে শুনে যাতে দর জমা দিতে পারে সে জন্য গাড়িগুলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
এবার নিলামে তোলা ১১২টি গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ছিল ১৮০ কোটি টাকা। আগের নিলামগুলোতে ল্যান্ড রোভার ব্রান্ডের গাড়ির দাম বেশি পড়েছিল। ২০০৬ সালে তৈরি ছয় আসনের ল্যান্ড রোভার ব্রান্ডের গাড়ির এবার সর্বোচ্চ দর পড়েছে মাত্র ২৮ লাখ টাকা।
একই ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ির সর্বোচ্চ উঠেছে মাত্র ১৯ লাখ টাকা। নিলামে কেপিএল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৬টি গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। এ ছাড়া ফারজানা ট্রেডিং ১১টি এবং শাহাদাত হোসেন ১১টি করে গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন।
পর্যটন সুবিধায় আনার পর চট্টগ্রাম বন্দরে আটক বিশ্বসেরা ব্রান্ডের গাড়ির নিলামে সর্বোচ্চ দর উঠেছে একটি বিএমডব্লিউ’র। জার্মানিতে ২০০৭ সালে তৈরি 730LD SE AUTO মডেলের গাড়িটি ৪ আসনের। ২৯৯৩ সিসির সিলভার কালারের গাড়িটির চাবি ও রাবার চ্যানেল পাওয়া যায়নি। হুইল ও ব্যাটারি ব্যবহারের অনুপযোগী।
সব জেনে বুঝে এ গাড়ির জন্য ফারজানা ট্রেডিং দর দিয়েছে ৫৩ লাখ টাকা। অবশ্য কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ গাড়িটির সংরক্ষিত মূল্য ধরেছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৬০ টাকা।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ডিটি রোডের দেওয়ান হাটের খাজা সায়মা টাওয়ারের ফারজানা ট্রেডিং গাড়িটি কেনার জন্য নিলামকৃত মূল্যের ১০ শতাংশ হিসাবে উত্তরা ব্যাংক থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার পে অর্ডার কাস্টম হাউসের অনুকূলে জমা দিয়েছে।
তবে নিলামে এ গাড়ির (লট) জন্য সর্বোচ্চ দর হাঁকালেও গাড়িটি আদৌ তারা নিতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। কারণ এর আগে এসব গাড়ির চারবার নিলাম হয়েছে, একেকটি গাড়ির দাম কোটি টাকা বেশি উঠেছে। কিন্তু নানা জটিলতায় এসব নিলাম বাতিল হয়েছে।
অপরদিকে মিতসুবিশি সোগান ব্র্যান্ডের একটি গাড়িতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন একজন। সংরক্ষিত মূল্য ছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৯২৪ টাকা।
২৭২০ সিসির একটি ল্যান্ড রোববার গাড়ির সংরক্ষিত মূল্য ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩২ হাজার ৬৫০ টাকা। এই গাড়িটির সর্বোচ্চ দরে উঠেছে ২৬ লাখ টাকা। গাড়িটি ২০০৫ সালের তৈরি। চাবি পাওয়া যায়নি।
কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. আল আমিন বলেন, পর্যটনসুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা আটক গাড়ির পঞ্চমবারের নিলামে ১১২টি গাড়ি তোলা হয়। এর মধ্যে ১১০টি গাড়ি কেনার জন্য ৫৫১টি দর জমা দিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
আগের চারবারের চেয়ে এবার ভালো সাড়া মেলেছে। যৌক্তিক দর পর্যালোচনা করে নামীদামি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো বিক্রির অনুমোদন দেবে কমিটি। যেগুলো বিক্রির অনুমোদন পাবে না সেগুলো আবারও নিলামে তোলা হবে।
তিনি জানান, নিলাম কমিটির অনুমোদন পাওয়া সর্বোচ্চ দরদাতা বিডাররা গাড়ি খালাসের সময় ১০ শতাংশ কর ও সাড়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। কিছু গাড়ির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রও লাগবে।
ইবাংলা/ এইচ/ ১৬ নভেম্বর,২০২১