স্বাস্থ্য অধিদফতরের শর্ত ভঙ্গ করে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের প্রবেশ মুখের বিপরীত দিকে একই ভবনে ‘মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ ও ‘এভার হেলথ হাসপাতাল’ নামে দুটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের কোন নীতিমালা না মেনেই একই ভবনে হাসপাতাল দুটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন নীতিমালায় রয়েছে কোন সরকারি হাসপাতালের অন্তত ৫শ’ গজ সীমানা এলাকার মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে কোন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কিন্তু এই নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই রাজধানীর মিটফোর্ডে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাপাতালের প্রবেশ পথের পাশেই মিটফোর্ড ভবনে ‘মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ ও এভার হেলথ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন ডা. মো: মোশাররফ হোসেন। পার্টনার হিসেবে মো: শাহাজাহান, মো: সাঈদ ও মো: মোশাররফ নামে আরও তিনজন।
জানা গেছে, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাপাতালের রোগীর দালালরা ’মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও এভার হেলথ হাসপাতালের একমাত্র ভরসা। একটি সূত্র জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালির কাজে নিয়োজিত করেছেন, আসমা, বিলকিস, রুবিনা, পারভিন, বৃষ্টি, কুলসুম নামে ৬জন নারী দালাল। দালালচক্র কমিশনের বিনিময়ে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে।
মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক পরিচয় দেওয়া ডা. মোশাররফ হোসেন। তিনি নিজেকে একজন অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেন। তার মেডিকেল ডিগ্রি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে মিটফোর্ড এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিটফোর্ড ভবনে হাসপাতাল দুটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তার নিচতলায় রয়েছে পারফিউমের (সুগন্ধি) দোকান, দোতলায় রয়েছে পারফিউম ও ওষুধের দোকান। তিনতলায় এভারহেলথ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে শুধু আইসিইউ, এনআইসিইউ ও ডায়ালাইসিস করা হয়।
চারতলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত ‘মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতাল’। মেডিলাইফের চিত্র ভিন্ন। অপারেশন থিয়েটার রয়েছে চারতলায়। এখানে দেখা গেছে রোগী ও স্বজনদের ভীড়। অপারেশন থিয়েটারের সামনে দীর্ঘ লাইন। এ যেন এক রেল স্টেশন।
কিছুক্ষণ পরপর অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগী বাহির করা হয়। এরপর ৫ম তলায় পোস্ট অপারেটিভে(অপারেশনের পর পর্যবেক্ষনে রাখা হয়) নেয়া হয়। অপারেশনের পর অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্ট্রেচারে করে সিঁড়ি দিয়ে রোগীকে একতলা উপরে নেওয়া হয় পোস্ট অপারেটিভ রুমে। এতে করে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বেশিরভাগই গর্ভবতি মায়েদের সন্তান প্রসবে সিজার করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০/৩০ জন প্রসূতিকে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। আর এসব রোগীদের পাশ্ববর্তী সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দালালরা নিয়ে আসে এই হাসপাতালে। বিনিময়ে তারাও পায় বড় অংকের কমিশন।
হাসপাতালটির সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, জরুরি চিকিৎসার জন্য আগত রোগীদের নিচতলা থেকে হাসপাতালে নিতে হলে টেনে হিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়েই উঠানো হয়। রোগী ওঠানোর জন্য কোন লিফট নেই। একটিমাত্র প্যাসেঞ্জার লিফট রয়েছে যেটা দোতলা থেকে চালু। এই লিফটেও সর্বোচ্চ ৮ জন ধারণ ক্ষমতা।
ইবাংলা /আমিন/ টিআর /০২ ডিসেম্বর ২০২১