শীতের শুরুতেই রাজধানীসহ সারাদেশে অবাধে চলছে নকল ও ভেজাল কসমেটিকস এর রমরমা বাণিজ্য । বিশ্বের সব নামীদামী ব্রান্ডের প্রসাধনীর বোতল,টিউব ও কৌটা আমদানী করে দেশি ফর্মুলায় তৈরি এসব প্রসাধনী বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বোঝার উপায় নেই কোনটা আসল আর নকল। এসব ক্ষতিকর নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের নানা সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
এসব প্রসাধনী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের না আছে কোন অনুমোদন কিংবা মান নিয়ন্ত্রণকারী কতৃপক্ষের সার্টিফিকেট, না আছে বাজারজাতকরণের ছাড়পত্র। বিগত কয়েক বছর র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের সারাসী অভিযানে কিছুটা কোন ঠাসা হলেও আবারও দেধারছে শুরু হয়েছে ব্যবসা। কারন শীতেই প্রসাধনীর চাহিদা বেশি।
খোজ নিয়ে দেখা যায়,রাজধানীর, কেরানীগঞ্জ,শ্যম্পুর,কদমতলী,যাত্রাবাড়ী, ডেমরা,দক্ষিনখান,ভাটরা পুরোন ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে নকল ও ভেজাল কসমেটিকস কারাখানায় বিশ্বের নামি দামি ব্রান্ডের প্রসাধনী তৈরী হচ্ছে। মোড়ক দেখে বোঝার উপায় নেই যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল। যা কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। এক ব্যবসায়ী ইবাংলাকে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট এলার দায়ীত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই তারা ব্যবসা করছে।
কারাখানাগুলোতে নকল ও নিম্নমানের সেভিং ফোম, সেভিং লোশন বা ক্রিম, পারফিউম, ট্যালকম পাওডার, সুগন্ধি কেশ তেল, বিউটি ক্রিম, স্যাম্পু, ফেস ওয়াশ, কন্ডিশনারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরি করে বাজারজাত করছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্বমানের ব্র্যান্ড গার্নিয়ার, লরেল, রেভলন, হেড এ্যান্ড শোল্ডার, লাক্স লোশন, মাস্ক লোশন, এ্যাকুয়া মেরিন লোশন, পেনটিন, নিভিয়া লোশন, ফেড আউট ক্রিম, ডাভ সাবান, ইমপেরিয়াল সাবান, সুগন্ধির মধ্যে হুগো, ফেরারি, পয়জন, রয়েল, হ্যাভক ও কোবরা। অলিভ অয়েল, কিওকারপিন, আমলা, আফটার সেভ লোশন, জনসন, ভ্যাসেলিন হেয়ার টনিক, জিলেট ফোম, প্যানটিক প্রোভি ও হারবাল এ্যাসেনশিয়াল লোশনের নামে ভেজাল প্রসাধনী বিক্রী হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
দেশে ভেজাল প্রসাধনী ব্যবসায় সম্পৃক্তরা আইনের ফাঁক গলে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে রাজধানীতে ভেজাল প্রসাধন সামগ্রীর বিরুদ্ধে বি,এস,টি,আইর রয়েছে স্বল্পসংখ্যক মাঠ কর্মকর্তা এবং রয়েছে সদিচ্ছার ও যথেষ্ট অভাব। তবে বি এস টি আই এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে জানান একাধিক ব্যবসায়ী।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নগরীর , চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, মহাখালী, গুলশান, মিরপুরসহ,ধানমন্ডিিউত্তরা, বনানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে বিক্রি হচ্ছে এসব নকল প্রসাধনসামগ্রী। সূত্রমতে, শুধু রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় দু’শ এর বেশি নকল প্রসাধনসামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে।
চকের কয়েকজন প্রসাধনী ব্যবসায়ী জানান, ঢাকার গুলশান, বনানী, মহাখালী, মগবাজার ও মৌলভীবাজার এলাকায় ভেজাল প্রসাধনসামগ্রীর আমদানিকারকদের অফিস রয়েছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় নকল প্রসাধন পণ্য তৈরি ও বিক্রির কারখানা হচ্ছে চকবাজারে। আর চকবাজারের চক মোগলটুলির খান মার্কেটে গড়ে উঠেছে নকল প্রসাধনী তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানা।
এসব ৭৫ ভাগ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের কোন নাম ঠিকানা নেই। বিএসটিআই-এর নিয়ন্ত্রণ এবং সামর্থ্য না থাকায় বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে বানানো প্রসাধনীর নামে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক জিনিসগুলির উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। এ সকল পণ্যের গুণগতমান সম্পর্কে ধারণা নেওয়ারও তাই কোনো সুযোগ নেই ভোক্তার।
ব্যবসায়ীরা নকলের দায়ে মামলা এড়ানোর জন্য নিম্নমানের এধরনের প্রসাধনী পণ্য বাজারজাতকরনে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বান করে। নামকরা কোম্পানির জিনিসগুলো হুবহু নকল করে তাতে মেইড ইন জার্মানির জায়গায় মেইড অ্যাস জার্মানি স্টিকার লাগিয়ে আবার কখনও ইউনিলিভার কোম্পানির ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির আদলে ফেজার অ্যান্ড লাভলি, ফুয়ার অ্যান্ড লাভলি ইত্যাদি নামে রং ফর্সাকারী ক্রিম , বিশ্বখ্যাত ‘রন্স বারবার’ শপের নামে ঢাকার কামরাংঙ্গিরনচর এলাকায় রন’স কসমেটিক্স নামের কারখানায় রনস শেভিং ফোম, রনস ফেইস ওয়াশ, রনস আফটার সেইভ লোশান্, রন্স এপ্রিকট, রন্স স্পিডি ন্যাচারাল ব্লাক ইত্যাদি প্রসাধনী তৈরি করছে।
নিম্নমানের এসব প্রসাধনীগুলো তারা একচেটিয়া বিক্রি করছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এলাকার পার্লার, সেলুন ও হেয়ার ড্রেসিং এর দোকানগুলোতে। ফলে চর্মরোগ থেকে শুরু করে মারাত্মক স্কিন ক্যান্সারের ঝুকিতে আছে ব্যবহারকারীরা। রনস কসমেটিক্সের উৎপাদিত এই সকল নিম্নমানের প্রসাধনীগুলো ব্যবহারে তরুণপ্রজন্মকে ও যুবকদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুক, ইউটিউবে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনও দেয়া হচ্ছে। আবার এসব বিজ্ঞাপনে মডেল হচ্ছেন সেলিব্রিটিরা।
প্রাথমিকভাবে ব্যবহারকারীর কন্টাক্ট ডারমাটাইসিস হয়, চামড়া লাল হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন তৈরি করতে পারে। এমন কি স্কিন ক্যান্সার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। নকল ও নিম্নমানের এ সকল প্রসাধন সামগ্রীতে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে তা মাত্রাতিরিক্ত এবং কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই, ফলে এলার্জি, ক্ষত, চামড়া কালো হয়ে যাওয়া, একজিমা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও দিনদিন বাড়ছে।
ইবাংলা /টিপি /১১ ডিসেম্বর ২০২১