অবিস্মরণীয় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশের

আমিনুল ইসলাম
বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন আজ ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার ৫০ বছর সুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং সকল বীরমুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
বিজয়ের ৫০ বছর উপলক্ষে ৫০টি জাতীয় পতাকা সম্বলিত র‌্যালি দেশের ৬৪টি জেলা প্রদক্ষিন শেষে  বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায় সমবেত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারী, আধা সরকারী ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। দেশব্যাপি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা জাতীয় কুচকাওাজ ও প্যারেডে অংশ গ্রহন করবেন। জাতীয় কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকবেন রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যসহ।
১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল হানাদার বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি। স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জন মাধ্যমে বাঙালি জাতি পেয়েছ একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা।
তাই আজ চারদিকে উৎসবের আনন্দ। মুখে মুখে জয়বাংলার গান। হাতে হাতে প্রিয় লাল-সবুজের পতাকা। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। এই স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট অনেক বছরের। সেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু। মুলত তথাকথিত ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা বৈষম্য, শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিল পূর্বপাকিস্তানিরা।
এরপর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে শাসকগোষ্ঠী। ফলে ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান।
একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছিল বাঙালির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।
আনন্দের পাশাপাশি জাতি বিজয়ের এ দিনে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
ইবাংলা/ ই/ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১
বাংলাদেশেরবিজয়েরসুবর্ণজয়ন্তী
Comments (0)
Add Comment