কিশোরগঞ্জে প্রায় আড়াই মাস আগে গরু ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের মূলে ছিল অর্থ আত্মসাৎ। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেফতার জাকির হোসেন ব্যবসায়ী রমিজকে হত্যা করে চিল্লায় আত্মগোপনে ছিলেন।
রমিজ উদ্দিন খামার ও গবাদি পশুর ব্যবসা করতেন। একথা জেনে তাকে কম দামে গবাদি পশু কিনে দেওয়ার কথা বলে কিশোরগঞ্জের কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় নিয়ে যান জাকির। পরে তিনি কৌশলে তাকে হত্যা করে মসজিদের দক্ষিণ পাশে ফেলে রেখে, টাকা লুট করে পালিয়ে যান।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে লক্ষ্মীপুরের একটি মসজিদে চিল্লারত অবস্থায় খুনি জাকিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যার অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় অচেতন একজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। পরে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করলে আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি মারা যান। ওই ব্যক্তির পাঞ্জাবির পকেটে থাকা কাগজপত্রের মাধ্যমে জানা যায় তার নাম রমিজ উদ্দিন, বাড়ি নরসিংদী জেলার মান্দারটেক। পরে নিহত রমিজের ছেলে বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৬) দায়ের করেন।
তিনি বলেন, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে গত পাঁচ বছর ধরে মোয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন জাকির। যেহেতু রমিজ গরু কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত ও খামার প্রতিষ্ঠা করছে তাই কম মূল্যে গরু কেনার ব্যাপারে জাকির তাকে প্রলুব্ধ করেন।
জাকিরের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সামীন্তবর্তী গ্রামে। সেখানে কম মূল্যে গরু পাওয়া যায়। তাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ঘটনার ১০/১২ দিনআগে রমিজকে নিয়ে গরু কেনা-বেচার স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন জাকির। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা তুলে ২ অক্টোবর জাকিরকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরে বড়পুল এলাকায় যান। সেখান থেকে রিকশা করে ঘটনাস্থলে যান তারা। এ সময় জাকির জানান গাড়িতে করে গরু এখানে আসবে। রাত বাড়তে থাকলে সুযোগ বুঝে কৌশলে রমিজকে ডাউরিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নিয়ে যান, পরে হাতুড়ির আঘাতে তাকে হত্যা করেন জাকির।
জাকিরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন আরও বলেন, যেহেতু রমিজ উঠতি বিত্তবান ব্যবসায়ী ছিলেন তাই তাকে প্রায় দু’মাস আগে হত্যা ও টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন জাকির। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়িটিও জাকির হত্যার একদিন আগে কিনেন। লুটের ছয় লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা ইতোমধ্যে জাকির খরচ করেছেন এবং বাকি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে রেখেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর জাকির কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে আসেন এবং বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের আযানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেন ও নামাজে অংশ নেন। ভোরে মক্তবে ২০ জন ছাত্রকেও পড়ান। ৩ অক্টোবর সকালে রমিজের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে জাকির ভয় পেয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে যান। নরসিংদী থেকে কয়েকটি জেলা হয়ে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন এবং সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন জাকির।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত রমিজ একজন প্রবাসী ছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালেয়েশিয়া ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি গরু কেনা-বেচার ব্যবসায় জড়িত হন। বর্তমানে ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে খামারের মাধ্যমে লালন-পালন করে বৃহৎ আকারে গবাদি পশুর ব্যবসা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
ইবাংলা/ এইচ /২২ ডিসেম্বর, ২০২১