তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানালেন, আইনমন্ত্রীর স্বাক্ষর করায় আগামী সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন হবে গণমাধ্যমকর্মী আইন। বছরের শুরুতে দারুণ ও খুশির খবর দিলেন মন্ত্রী। তবে কি থাকছে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি শর্তাবলী) আইন-২০১৮-তে?
** গণমাধ্যমকর্মী: (সাংবাদিক ও কলাকুশলী)-
গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকুশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিতরা হলেন গণমাধ্যমকর্মী। সম্প্রচারকর্মী হলেন, সম্প্রচার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমের কর্মী।
প্রযোজক, পাণ্ডুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ পেশাজীবীরা যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের কলাকুশলী বলা হবে।
** শ্রম আইনের অধীনে নয়-
১৯৭৪ সালের আইনের কারণে সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ডেফিনেশনের মধ্যে শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়েছিল। নতুন আইনে, যারা গণমাধ্যমে কাজ করবেন তারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরিচিত হবেন।
** আইন অনুযায়ী, প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে- নিয়োগের এক বছর পর থেকে ভবিষ্যৎ তহবিলে মাসিক চাঁদা দিতে পারবেন। আগে দুই বছর চাকরি হলে ভবিষ্যৎ তহবিলে চাঁদা দিতে পারতেন। সর্বনিম্ন ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ এই তহবিলে জমা রাখা যাবে। মালিককে সমহারে টাকা রাখতে হবে।
** সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৩৬ ঘণ্টা
গণমাধ্যমকর্মী আইনে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে।
** ছুটিতে যত সুবিধা
আগের ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের বদলে ১০০ দিন করা হয়েছে। ১১ দিনে একদিন করে জমা হবে। প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী চাকরির ১৮ ভাগের এক ভাগ সময় অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মীরা এককালীন বা একাধিকবার সর্বোচ্চ ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন। নারীরা সরকারি বিধি অনুযায়ী অর্থাৎ ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন।
খসড়া আইন অনুযায়ী গণমাধ্যমকর্মীরা তিন বছর পরপর পূর্ণ বেতনসহ শ্রান্তি বিনোদন ছুটি পাবেন। গণমাধ্যমকর্মী বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা পাবেন।
** চাকরিবিধি পরিদর্শনে কমিটি-
আইনে পরিদর্শন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন। পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে, যা এই আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রচলতি আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে অভিযোগ নিরসন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে।
** পাওনা আদায়ে আদালতে মামলা
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে গণমাধ্যমকর্মীর বকেয়া পাওনা থাকে, তবে গণমাধ্যমকর্মী বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যমকর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথোপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
** গণমাধ্যমকর্মীদের ওয়েজবোর্ড-
গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার ওয়েজবোর্ড গঠন করবে। ওয়েজবোর্ডের সিদ্ধান্ত সব গণমাধ্যম মালিককে পালন করতে হবে।
** হুটহাট চাকরিচ্যুত বন্ধ-
এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির আইনগত সুরক্ষা দেবে গণমাধ্যমকর্মী আইন-২০১৮। এতে হুটহাট চাকরিচ্যুত করার প্রবণতা ও সুযোগ বন্ধ হবে।
[তথ্যসূত্র: আইনের খসড়া নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর]
ইবাংলা /এইচ/ ০৩ জানুয়ারি, ২০২২