দলে ‘জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি’ পদ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তৃণমূলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসছে। দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে (তিনি কোথাও সফরে গেলে বা অন্যত্র ব্যস্ত থাকলে বা অনিবার্য কারণবশত কাজ করতে অপারগ থাকলে) তার ভূমিকায় কাজ করবেন তিনি। মুলত মমতাকে ‘সাহায্য’ করার জন্যই দলে ওই পদ তৈরি করা হয়েছে।
ওই পদের জন্য অধুনা দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘স্বাভাবিক পছন্দ’ মনে করা হচ্ছে। অন্দরে ক্ষমতার উত্তরাধিকারের বিষয়টিরও সংবিধানসম্মত ভাবেই ফয়সালা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন দলের প্রথমসারির নেতারা। গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সেই পদটি ‘মনোনীত’। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তিনি ‘নির্বাচিত’ হয়ে এলে দলের অন্দরে তাঁর কর্তৃত্ব আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
তৃণমূলের ‘জাতীয় পরিষদে সদস্যসংখ্যা হবে ২,০০০। ওই পরিষদের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচিত এবং মনোনীত— দু’ধরনের প্রতিনিধিই থাকবেন। ওই পরিষদই হবে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি। তারাই জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতিকে পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত করবে।
সংবিধান সংশোধন করে এই বিষয়টির পাশাপাশিই আরও যে বিষয়টি নিশ্চিত করা হতে চলেছে, তা হল ছ’জন ‘জাতীয় সাধারণ সম্পাদক’ নিয়োগ। যাঁরা দলের সংগঠন এবং কাজকর্ম দৈনিক ভিত্তিতে দেখাশোনা করবেন। তৃণমূলের সদস্যপদ এবং সদস্যদের প্রদেয় ‘ফি’ নিয়েও বদল আনা হচ্ছে।
দলের শীর্ষনেতাদের কথায়, ২০১১ সালে দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর আড়ে-বহরে তার বিপুল বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে দলে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর প্রয়োজন আছে। পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী মমতার দলীয় কাজকর্মের ভার লাঘব করাও জরুরি। তাঁরা মনে করছেন, রাজ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে তৃণমূল যখন জাতীয় ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা শুরু করেছে, তখন দলের কাঠামোর পুনর্বিন্যাস আরও জরুরি। তৃণমূল এমনিতে জাতীয় স্তরের দল। কিন্তু ইদানীং জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা অনেক বেড়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই জাতীয় পর্যায়ে দলের পুনর্বিন্যাস জরুরি।
বস্তুত, দলের নেতাদের একটা বড় অংশের মতে, দল প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম তৃণমূলে ‘অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র’ স্থাপিত হতে চলেছে। যেখানে তৃণমূল স্তর থেকে দলের দু’নম্বর ক্ষমতাশালী পদটি হবে ‘নির্বাচিত’। ওই সংবিধান সংশোধনে এটাও স্পষ্ট হতে চলেছে যে, মমতাই আজীবন দলের সর্বোচ্চ পদে থাকবেন। কারণ, সংবিধান সংশোধনের খসড়য়া দলের সর্বোচ্চ পদে এখনও পর্যন্ত কোনও মেয়াদ বেঁধে দেয়া বা ওই পদে নির্বাচন করা অথবা সর্বোচ্চ পদাধিকারীকে অপসারিত করার কোনো অবকাশ রাখা হয়নি এখনও পর্যন্ত।
খসড়ায় বলা হয়েছে, দলের চেয়ারপার্সনকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করা ছাড়াও কোনও অনিবার্য কারণে চেয়ারপার্সন তাঁর কাজ না করতে পারলে জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতিই চেয়ারপার্সনের কাজ করবেন। জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি তাঁর পদাধিকার বলে দলের উপদেষ্টা কমিটিরও সদস্য হবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, দলে ছ’জন সাধারণ সম্পাদক থাকবেন। প্রত্যেকেই মনোনীত হবেন। তাঁরা এক একজন সমণ্বয়, সংগঠন, যোগাযোগ, শাখা সংগঠন, নির্বাচন সংক্রান্ত এবং দলীয় দফতর দেখাশোনা করবেন।
খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী তৃণমূলের সদস্যপদ আরও মহার্ঘ হতে চলেছে। দু’ধরনের সদস্যপদ থাকবে। প্রাথমিক এবং সক্রিয়। বলা হয়েছে, দলের প্রাথমিক সদস্য যে কেউ হতে পারেন। কিন্তু তাঁরা আরও ১০ জনকে দলে যোগদান করাতে পারলে তখনই ‘সক্রিয়’ সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন। সক্রিয় সদসযদের ভোটাধিকার থাকবে। তাঁরা দলীয় দফতরও খুলতে পারবেন। বর্তমান সংবিধানে সমস্ত প্রাথমিক সদস্যেরই ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু এ বার তাতে বদল আসতে চলেছে। বাড়ছে বার্ষিক সদস্যপদের খরচও। খসড়া প্রস্তাবে ২০ গুণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। বছরে ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নেতৃত্বের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল সদস্যপদের বিষয়টিও খসড়ায় রাখা হয়েছে।
ইবাংলা/টিপি/ ১৫ জানুয়ারি,২০২২