বরগুনার বেতাগী উপজেলায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের মধ্যে চরম সখ্যতায় পাকা রাস্তা সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে এসব অনিয়মের সততা মিলেছে।স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী বিভাগের অধীনে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতাধীন বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বয়াতি বাড়ি পুলঘাট থেকে বাঁধঘাট বাজার পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ মিটার রাস্তা সংস্কারের কাজে দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী ৮৯ লাখ টাকার এ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের এই দরপত্র আহবানে রাস্তাসংস্কারের কাজ পান বরগুনার ‘সার্ক এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ওই কাজের চুক্তিভিত্তিক ক্রয়কৃত ঠিকাদার। তিনি আবার সাব-ঠিকাদার বেতাগী উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো: শাহ আলম রুবেল। ওই ঠিকাদারের সাথে বেতাগী উপজেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো.ইব্রাহীমের সাথে চরম সখ্যতার সম্পর্ক থাকায় এ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও কাজের মান যথেষ্ট খারাপ এমনটাই দাবি এলাকাবাসী। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের নীলখোলা বাজার হয়ে বাঁধঘাট বাজার পর্যন্ত মোট ৪ হাজার মিটার দূরত্বের রাস্তা ১ হাজার ৪০০ মিটার ইতোপূর্বে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে। গত ২০২১ সালের জুন মাসে বাকি ২ হাজার ৬০০ ফুট রাস্তার দরপত্র আহবান করেন বেতাগী উপজেলা স্থানীয় সরকার ও উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ । রাস্তার পূরাতণ সামগ্রী অভ্যান্তরিন রেখে যার নির্মান ব্যয় ধরা হয় ৮৯ লাখ ৭৬ হাজার ৫১১ টাকা। আর এই রাস্তা সংস্কারে কাজ পান বরগুনার ‘সার্ক এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য তারা কাজটি বেতাগীর এক ঠিকাদারের নিকট চুক্তিভিত্তিক বিক্রি করেছেন। এদিকে কাজের শুরু থেকেই স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ দায়সারাভাবে তদরকি করছেন। এ কারণে ঠিকাদারের অনিয়মের যোগসাজেসে নামেমাত্র চলছে রাস্তার সংস্কার কাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজের ধরণ ও প্রাক্কলনের কাগজ মিলিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুইপাশের সাপোর্ট হিসেবে মাটির কাজ বাবদ মোট বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যেখানে ঠিকাদার ৫ হাজার টাকার মাটির কাজও করেননি দাবি এলকাবাসীর। বরাদ্দের কাগজে রাস্তার দুইপাশের ইজিং ইট ৫ ইঞ্চি প্রস্থে বসানোর কথা থাকলেও, বাস্তবে পুরো রাস্তার ইজিংয়ের প্রস্থ ৩ ইঞ্চি। ২ হাজার ৬০০ ফুট রাস্তার মধ্যে রোড সেইফটি ওয়ার্ক ১১টি স্থানের নরম স্থানের মাটিতে ঢালাইয়ের বাবদ ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও লোকাল বালি দিয়েই তা পরিপূর্ণ করেছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহ আলম রুবেল ঠিকাদার।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, তারা বরাদ্দ ও প্রাক্কলনের কাগজপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখান, রাস্তার পূরাতন সামগ্রী খোয়া, ইট, বিটুমিন মাখা পাথর ও ইজিংয়ের ইট কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী পুরো রাস্তা চষে রোলার দিয়ে সমানভাবে মিশিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর ওপর কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি বালুর আস্তরণ এবং সর্বশেষ তার ওপর ৪ ইঞ্চি মানসম্মত ইটের ম্যাকাডম ফেলে রোলার করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদার রাস্তার সকল পূরাতণ ইট দিয়ে দুপাশে ইজিং বসিয়েছেন। অন্যদিকে বাকি সকল পুরাতন ইট ও ম্যাকাডম ভেঙে ওই ঠিকাদারের অন্য দু‘টি কাজের সাইটে পাঠিয়েছেন। এছাড়া চলমান রাস্তার নতুন ম্যাকাডম হিসেবে রাস্তার প্রয়োজনের অর্ধেকেরও বেশি পরিমান ওই রাস্তার পূরাতন রাবিশ ম্যাকাডম পাশ্ববর্তী একটি বিদ্যালয়ের সামনে স্থুপ করে রেখেছে। যা ইতোমধ্যে ওই রাস্তার ব্যবহার করা হয়েছে ।
এসময় স্থানীয় লিটন সিকদার বলেন, উন্নয়নের নামে সরকারের অর্থ দিয়ে এতটা পুকুরচুরি কোনো নির্মানকাজে হতে দেখিনি। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারের সাথে প্রকৌশলী ইব্রাহিমের বেশ সখ্যতা রয়েছে।এলজিইডির এই দায়িত্বহীনতার কারনেই রাস্তার কাজের মান খারাপ হচ্ছে।এ বিষয়ে স্থানীয় এলজিইডির অভিযুক্ত উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো: ইব্রাহীম বলেন, এ কাজে আমার তদারকি ছিলো, সেখানে তেমন কোন অনিয়ম হয়নি।
অভিযুক্ত বরগুনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সার্ক এন্টারপ্রাইজ স্বত্তাধিকারী তার নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রশন করে জানান, আমার লাইসেন্সে প্রাপ্ত কাজটি চুক্তি ভিত্তিকভাবে বিক্রি করেছি। এখন কাজের সকল দায়ভার সাব ঠিকাদারের রয়েছেন।তিনি আরও জানান, তাদের বিক্রিত কাজের ঠিকাদার বেতাগী উপজেলার পদধারী যুবলীগ নেতা,কাজে তো কেউ বাঁধা দেয়ার কথা না।ক্রয়কৃত কাজের সাব ঠিকাদার ও বেতাগী উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো: শাহ আলম রুবেল বলেন, আমার কাজ শতভাগ সঠিকভাবে হচ্ছে। আমি কোন অনিয়ম করিনি।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী বিভাগের বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো: রইসুল ইসলাম বলেন, আমরা রাস্তার কাজ ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছি। সেখানে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুহৃদ সালেহীন নয়াদিগন্তকে বলেন, আমি এ রাস্তা সংস্কার নির্মান কাজে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি । সাব ঠিকাদার ইতিমধ্যে আমার দপ্তরে এসে ভালোকাজ করার অঙ্গীকার করছেন।আমি তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবো।
ইবাংলা/ নাঈম/ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২