দুদকের মামলায় বাছিরের ৮, মিজানের ৩ বছরের কারাদণ্ড

অবৈধভাবে তথ্য পাচার ও ঘুষ লেনদেনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ৮ বছর এবং পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানের ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। এর আগে, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে আলোচিত এই মামলার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দুই আসামি এনামুল বাছির ও ডিআইজি মিজান।

ডিআইজি মিজানকে দুইটি ধারায় তিন বছর এবং বাছিরকে পৃথক দুটি ধারায় ৮ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে দুদকের সাবেক পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডেরও আদেশ দেন বিচারক।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি দুদক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি মামলার অপর আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন।

পরে ১০ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন।

গতবছরের ২৩ ডিসেম্বর এই মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এরপর ১২ জানুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থনে ডিআইজি মিজান ৬ পৃষ্ঠা এবং এনামুল বাছির ১২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেন।

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা।

গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলি করেন। এরপর ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান।

ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। এ বিষয়ে তিনি নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।

এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দেলোয়ার বখতকে প্রধান করে ৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।

এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে। অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার ডিআইজি মিজানকে এই মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল।

ইবাংলা/ ই/ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

কারাদণ্ডঘুষতথ্য পাচারবাছির ও মিজানের
Comments (0)
Add Comment