দেশের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

শিশু-কিশোরদের সামনে দেশের বিজয় ও অর্জনের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এটা জানলে তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, প্রকৃত ইতিহাস জানলে শিশু কিশোররা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, স্বার্থপরের মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে দেশের জন্য মানুষের কল্যাণে কিছু করার একটা আগ্রহের সৃষ্টি হবে, একটা চেতনা আসবে। যেটা আমাদের জন্য খুবই দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে করে তাদের মেধা, জ্ঞান, শৈল্পিক মন ও মনন বিকশিত হবে। তারা কে কোন ব্রান্ড পরবে বা ধন সম্পত্তির পেছনে কেবল ছুটে বেড়াবে না। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ওপর ভিত্তি করে আঁকা একটি স্ক্রল পেইন্টিং এর পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা অনেক দিবস পালন করলেও সেই দিবসের মাহাত্ম্যটা কি, ইতিহাসটা কি, অনেক সময় দেখা যায় আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারে না। কাজেই দেশের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে আরো নজর দেওয়া দরকার।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর পর ২১ বছর তরুণ প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি, বরং ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ফলে অনেকেই আশপাশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় পরিজন থেকে পরিপূর্ণ বা সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেন আমরা উদযাপন করি, জাতির পিতার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড বা ’৭১ এ যেভাবে এদেশে গণহত্যা হয়েছে বা আমাদের সংগ্রাম- সে সময়ে যে সাহস নিয়ে আমাদের নিরস্ত্র বাঙালি অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, সেই বিজয়ের সঠিক ইতিহাস-এরকম বহু ঘটনা আমাদের জীবনে রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আমাদের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রজন্মের পর প্রজন্মের জানা উচিত।

তিনি বলেন, প্রকৃতি আমাদের এত সুন্দর একটা দেশ দিয়েছে সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই সবার মাঝে এই শৈল্পিক চেতনাটা রয়েছে এবং যার বিকাশটা দরকার।

এ সময় দেশের শিল্প সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতা তার সরকার যেমন অব্যাহত রেখেছে তেমনি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে তিনিও করে যাবেন বলে উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মহাজীবনের পট’ শীর্ষক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই স্ক্রল পেইন্টিংয়ের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

বঙ্গবন্ধুর বৈচিত্র্যময় ও বহুমাত্রিক জীবন তুলে ধরে এ স্ক্রল পেইন্টিং এঁকেছেন দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। ১৫০ ফুট দীর্ঘ স্ক্রল পেইন্টিংটি বাংলাদেশে সম্পাদিত সর্ববৃহৎ পটভূমিতে জাতির পিতার জীবনভিত্তিক চিত্রকর্ম। চিত্রশিল্পীর ভাষায় মাটি থেকে তৈরি বার্নট অ্যাম্বার রং এর মাধ্যমে মাটি থেকে উঠে আসা ইতিহাসের এই মহানায়ককে চিত্রিত করেছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। স্ক্রল পেইন্টিংটির শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রদর্শনীর আয়োজন সহযোগী বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মাত্রা’র পক্ষ থেকে ম্যানেজিং পার্টনার শিল্পী আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি শিল্পী জামাল আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিববর্ষের থিম সং এবং স্ক্রল পেইন্টিং এর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়।

ইবাংলা/ নাঈম/ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

অনুপ্রাণিতবাংলাদেশশিক্ষামন্ত্রী
Comments (0)
Add Comment