সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বস্তিবাসীদের মাঝে ৩০০ ফ্ল্যাটের যে ভাড়া পত্র হস্তান্তর করেছেন, সেখানে নুরজাহানের ভাগ্যেও একটি ফ্ল্যাট জুটেছে। ফ্ল্যাট নং ৫, বিল্ডিং নং ৪। প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানের দিন অন্যদের মতো তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় তার আনন্দের সীমা ছিলো না।
কিন্তু নুরজাহানের সে দিনের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফ্ল্যাটের ভাড়াপত্র দেখে তার চোখ ছানাবড়া। তার একার পক্ষে এত ভাড়া মেটানো সম্ভব নয়। নুরজাহান ই-বাংলাকে বলেন, চুক্তিতে ৪ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়ার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু গ্যাস, কারেন্ট, পানি ও সার্ভিজ চার্জ মিলিয়ে আরও যে টাকা আসে তা আমাদের পরিশোধ করতে হবে। হিসাব করলে আরও ৫ হাজার টাকার মতো লাগে। তাহলে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া বাবদ সাড়ে নয় হাজার টাকার মতো পড়বে। এ টাকা প্রতিমাসে দিতে হবে। এ টাকা পাবো কোথায়?
রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়াবাঁধ কলাবাগান বস্তির বাসিন্দা নুরজাহান। পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে বস্তির ১ কক্ষের ঝুপড়িতে বাস করেন।
অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করে মাসে ৫ হাজার টাকার আয় করেন। স্বামী অসুস্থ থাকায় নিয়মিত কাজে যেতে পারেন না। সংসারের খরচ অনেকটা তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। সংসারের খরচ বাদ দিয়ে যা সঞ্চয় হয়েছে সেটাও বস্তিতে ঘর মেরামতের কাজে ব্যয় করেছেন।
শুধু নুরজাহান নয়, মিরপুর ১১ নম্বর কলাবাগান বস্তিতে যারা ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট পেয়েছেন, তাদের আনন্দ বিশাদে পরিণত হয়েছে।
সোমবার (৯ আগস্ট) সরজমিন মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়াবাঁধ কলাবাগান বস্তির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বস্তির বাসিন্দা গার্মেন্ট শ্রমিক আলমগীর বলেন, তিনি ৫ নম্বর বিল্ডিংয়ের ৭তলায় একটি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট পেয়েছেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জন। তিনি জানান, সাড়ে চার হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেওয়ার পরও অতিরিক্ত ৫-৬ হাজার টাকা লাগবে। এখানে গ্যাস নেই। আমার পরিবারে সদস্য বেশি। দুইটা গ্যাস সিলিন্ডার লাগবে। গ্যাস, পানি, বিদুৎ ও সার্ভিজ চার্জ মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার মতো পড়বে। বস্তিতে যারা থাকে তাদের কি এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আছে?
কলাবাগান বস্তির বাসিন্দা ও বস্তির চেয়ারম্যান (বস্তিবাসী তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে মানেন) নজরুল ইসলাম নাঈম বলেন, ৫ বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বস্তি ভেঙে দেওয়ার আগে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন পুনর্বাসন করবেন। আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবো। তিনি মানবতার মা, তিনি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করেছেন, বিহারীদেরও করছেন।
প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমাদেরও পুনর্বাসন করতে পারেন। আগে এখানে ডোবা ছিল। আমরা এ বস্তিতে মাটি ফেলে সমান করেছি। ঘর করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখানে আমরা বিনা ভাড়ায় থাকি। আমরা ভাড়া দিতে অভ্যস্ত নই।
বস্তিবাসীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আমাদের ফ্ল্যাট দিলেও ভাড়া কমাতে হবে। কিস্তির সুবিধা দিতে হবে। ফ্ল্যাটের মালিকানা দিতে হবে। ভাড়া দিয়ে তা পরিশোধ করবো। এখানে যারা ফ্ল্যাট পেয়েছে সবাই আওয়ামী লীগ করে। যদি ফ্ল্যাটের মালিকানা না পাই তাহলে অন্য সরকার এলে আমাদের বের করে দেবে। আমরা যাবো কোথায়?
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মিরপুর ঢাকা ডিভিশন ১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট শেখ সোহেল রানা জানান, ভাড়ার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ থাকলে যারা ফ্ল্যাট পেয়েছেন তারা সবাই মিলে আবেদন করতে পারেন। আরও কিছু জানতে হলে আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের সাথে কথা বলেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও কনফারেনসিংয়ের মাধ্যমে মিরপুরে বস্তিবাসীর মাঝে ৩০০ ফ্ল্যাটের ভাড়া পত্র হস্তান্তরে করেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবনে ৫৩৩টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
ই-বাংলা.প্রেস/ আইএফ/ ১০