প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি চারিদিকে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ (মেগা প্রকল্প) চলমান থাকার পরও যারা (বিএনপি নেতৃবৃন্দ) দেশের উন্নয়ন দেখতে পান না, তাদেরকে চোখের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কাযালয়ে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, তাদের চাখে পড়েনা যে শতভাগ বিদ্যুৎ, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে যার সুফলটা তারাও পাচ্ছে, এটা কি উন্নতি নয়? পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফূলী টানেল, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও তাদের চোখে পড়ে না, আজকে দারিদ্রের হার হ্রাস, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন- এগুলো কি উন্নয়নের লক্ষন নয় ?
এ সময় ’৯৬ পরবর্তী সময়ে সরকারের থাকার সময় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পর্ণতা অর্জন করলে, জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেয়ার সময় বিএনপি’র সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং খালেদা জিয়ার বক্তব্য- ‘খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করা ভাল নয়, তাহলে বিদেশি খাদ্য সাাহায্য পাওয়া যাবেনা’ উদ্ধৃত করে এর তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘মোস্তাক- জিয়া মিলেই জাতির পিতা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল’- পুণরায় এই অভিযোগ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চার জাতীয় নেতাকে হত্যা থেকে শুরু করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর ক্ষমতাকে নিস্কন্টক করার জন্য একদিকে যেমন সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক-অফিসারকে হত্যা করেছে, তেমনি আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গুম খুন করেছে।
যাদের জন্ম সেনা ছাউনিতে, ক্ষমতা দলকারির পকেট থেকে এখন তাদের কাছ থেকেই আমাদের গণতন্ত্রের সবক শিখতে হবে, এটাই জাতির দুর্ভাগ্য। বিএনপি নেতৃবৃন্দের সম্প্রতিক বক্তব্য ‘গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে তিনি তাদের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা জানতে চান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রি ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। দলের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও বক্তৃতা করেন।
আরো বক্তৃতা করেন- দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষি মন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও আজিজুস সামাদ আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী এবং উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি সভাটি গণভববন থেকে সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কোথাও কোন মঙ্গা হয় নাই। তিনি আবারো প্রশ্ন তোলেন, উত্তর বঙ্গেই যাদের বাড়ি তারাও কি সেটা দেখেনা ? তারা মনে হয় চোখে দেখে না ,তাই তাদের কথা দেশের নাকি কোন উন্নতিই হয়নি।
এ সময় উত্তর বঙ্গে ধরলা ব্রিজ এবং গাবখান ব্রিজ করার প্রসংগ টেনে বলেন, তিনি উদ্বোধন করে যেতে না পারায় ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যেই খালেদা জিয়া ধরলা ব্রিজ উদ্বোধন করে নিজেরাই করার দাবি করে এবং বলে আওয়ামী লীগ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি সেতুও নাকি করেনি।
সরকার প্রধান বলেন, তারা মিথ্যে বলায় এক্সপার্ট। তারা ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বলেই যাচ্ছে। যদিও তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠা করা ডিজিটাল বাংলাদেশে এই ভাঙ্গা রেকর্ড শব্দটির সঙ্গে আর কারো পরিচিতি নেই। কিন্তু তারা একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে। নিজেরা ইতিহাস বিকৃতি করে এখন ইতিহাস বিকৃতিরও অভিযোগ তুলছে তারা ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ – এই শ্লোগান আওয়ামী লীগের, আমরা দিয়েছি। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য এই শ্লোগান দিয়েই সংগ্রাম করে আজকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল, জিয়া এরশাদের পকেটে ছিল বা খালেদা জিয়ার আঁচলে ছিল। আমরা জনগণের সেই ক্ষমতাকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। আজকে জনগণের ক্ষমতায়ন আমরা করেছি। সেখানে যদি বিএনপি নেতারা এখন গণতন্ত্র না দেখে, উন্নয়ন চোখে না দেখে তাহলে বলার আর কিছু থাকেনা।
কিন্তু হ্যাঁ তাদের একটা গুণ আছে তারা মিথ্যে কথা ভালভাবেই বলতে পারে। সেই ভাঙা স্যুটকেস ছেড়া গেঞ্জি থেকে কোকো লঞ্চ ১, ২, ৩, ৪ বের হলো। তারপর ডান্ডি ডাইং বের হলো, কতকিছু বের হলো। তারা দুর্নীতি করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, খালেদা জিয়ার ছেলেদের সেই পাচার করা অর্থের কিছুটা আমরা দেশে ফেরতও এনেছি। কাজেই এরা দুর্নীতির কথাই বা বলে কি করে বা ভোটের কথাই বা বলে কি করে আর উন্নয়ন চোখে পড়েই না বা কি করে।
তিনি বিএনপি’র নেতৃত্ব শূন্যতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোট দেবে কেন? তাদের নেতা কে? এতিমের অর্থ আত্মসাতকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারী, অর্থ পাচারকারী এবং গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী হচ্ছে তাদের নেতা। কাজেই, সে দলকে মানুষ কেন ভোট দিতে যাবে? মানুষতো ভোট দেবেনা।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়ে যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা আমরা বলেছি, আমরা একে একে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প নিয়েছিলাম, খালেদা জিয়া এসে সেটাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছিল।
যা হোক পরবর্তীতে সেটাকে আমরা ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ নাম দিয়ে গ্রামের কোনো মানুষের যেন কোনো অভাব না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মানুষকে আর ঋণের বোঝা টানতে হবে না। বরং তারা নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে এবং তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে এই প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
যার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসে বিরাট সক্ষমতা আমরা অর্জন করছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাটি ও মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং আমরা মানুষের কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম তা পূরণ করেছি। আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।
এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আর কেউ বাংলাদেশকে পিছু টানতে পারবে না। সেভাবেই আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আজকে জয় বাংলা শ্লোগান ফিরে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আজকে প্রতিষ্ঠিত, বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আজকে আর কোন বিকৃত ইতিহাস হবেনা। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে চেতনা নিয়ে বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা পাবে এবং সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাব।
ইবাংলা / জেএন /২৭ মার্চ ২০২২