আমাদের কোনো মান নাই, মযার্দা নাই। গিরাম করে খাই। সাপ খেলা দেখাই। শিঙা দেই, লতাপাতা বেচি। মেয়েছেলেদের গিরাম করতে অনেক আজেবাজে কথা শুনতে হয়। পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছোট ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকি।
জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। এই যাযাবর জীবন থেকে মুক্তি পাচ্ছি। জীবনে ভাবি নাই, নিজের নামে জায়গা হবে। নিজের ঘর হচ্ছে পাকা। বাচ্চারা পড়বে। জায়গাটাও খুব সুন্দর’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক এর উদ্যোগে ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোশারফ হোসেনের তদারকিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ায় এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনোদপুরে ভাসমান থাকা বিলকিস বেগম।
বিলকিস বেগম বলেন, ‘আলো নেই, চালা নেই, সন্তানদের কোনো জীবন নেই। ইউনো স্যার ও এসিলেন্ড স্যার আমাদের আসল জীবন দিয়েছে। ৫০ বছর বয়স হইচে, ভাবি নাই এই লাথি-উষ্ঠা থেকে রক্ষা পাব। আল্লাহ তারে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুক।’
বংশ পরম্পরায় এভাবে চলে আসা বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন ও পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নিয়েছে নবীনগর উপজেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে চারটি বেদের সম্প্রদায়ের পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত ববিতা আক্তার বলেন স্যাররা আইসা ঘর দেখাইয়া গেছে। হেরা বলছে, হামাগো রে নাকি নতুন ঘর দিবোইন। হে ঘরের কাজ চলছে। হামারা অপেক্ষায় আছি।’ ঘর পাওয়ার আগাম খবরে খুশি তার পরিবারের সদস্যরা। সে ঘরে কীভাবে থাকবেন, কীভাবে সাজাবেন মনের কোণে সেই স্বপ্ন বুনে রেখেছেন ববিতা।
সমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে খোলা আকাশের নিচে থেকে এনে স্থায়ী বসবাসের জায়গা করে দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক ও জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিক বলেন , বেদেরা যেহেতু নদীতে থেকে অভ্যস্ত, তাই নদ্যির পাশেই ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে তারা মনে করবেন, তারা নদীতেই বসবাস করছেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের নির্মিত ঘরগুলো অধিকতর টেকসই ও দুর্যোগ সহনীয় করে নির্মাণ করা হবে। এখানে বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা থাকবেন বলে রাজি হয়েছেন। এই প্রথম বেদে সম্প্রদায়ের জন্য সর্ববৃহৎ আবাসস্থল করা হচ্ছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণ হবে।
সহকারী কমিশনার ভূমি মোশারফ হোসাইন জানান সমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য তাই তাদের এই ঘরগুলো নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
ইবাংলা/ টিএইচকে/ ১৪ এপ্রিল, ২০২২