কুমিল্লার আর্দশ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের অলিপুর এলাকায় গৃহবধূ ফারজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতক স্বামী মো. ইকবালকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃত ইকবাল জেলার আদর্শ সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের আ. হাকিম ছেলে ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামি।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ২৪ এপ্রিল আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের মস্তফাপুর (কাছার) এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গৃহবধূ ফারজানা বেগম (২৯) হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গৃহবধূ ফারজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার করতে র্যাবের গোয়েন্দা দল মাঠে নামে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে র্যাবের একটি অভিযানে মামলার প্রধান আসামিকে আটক করে র্যাব-১১। এছাড়া একইদিন মামলার ২, ৩ ও ৬ নং আসামিকে আটক করে পুলিশের নিকট হস্থান্তর করে র্যাব।
মেজর সাকিব আরও জানায়, ঘাতক ইকবাল পেশায় একজন অটোচালক, বিভিন্ন গাড়ির ব্যাটারি এবং গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন ধরণের চুরিরসহ তার নামে একাধীক মামলাসহ রয়েছে। সে তার স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে কুমিল্লা শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
২০১০ সালের একটি চুরির ঘটনার দুইমাস পূর্বে ওয়ারেন্ট জারি হাওয়ার জামিনে বের হওয়ার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৫ হাজার টাকা জমিয়ে স্ত্রী ফারজানার কাছে রেখে যান। গ্রেপ্তার হলে জামিনে বের করার জন্য স্ত্রীকে বলে যান। কিছুদিন পর ইকবালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে স্বামী জেলে থাকায় ভাড়া বাসায় শিশু সন্তানকে নিয়ে কষ্ট থাকায় ইকবালের রেখে যাওয়া ৫ হাজার টাকা দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে ভাড়া বাসার সমস্ত মালামাল নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় ফারজানা।
পরে জেলখানাতে গিয়ে ফারজানা তার স্বামী ইকবালকে ভাড়া বাসা ছেড়ে তার বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ার ঘটনাটি বলতেই ইকবাল স্ত্রী ফারজানার উপর চড়াও হয়, এবং ইকবালকে দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়ে চলে আসে।
ইকবালের স্ত্রী তাকে জামিনে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জামিনে বের করার ব্যাপারে কোনো তৎপরতা না করায় স্ত্রীর উপর আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে চলিত মাসের প্রথম সপ্তাহে জেল থেকে জামিন পেয়ে তার বোন কলির কাছে যায় এবং বোনের কাছে রেখে যাওয়া মোবাইল ফোন নিয়ে শশুর বাড়িতে যায়। শশুর বাড়িতে যাওয়ার পরে স্ত্রী কেন তাকে জামিন না করিয়ে বাসার মালামাল নিয়ে শশুর বাড়িতে চলে আসছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরিকল্পনা মোতাবেক ইকবালের পূর্ব পরিকাল্পিত স্থান যেখানে ফারজানাকে হত্যা করার জন্য পূর্বেই ইকবাল ইট রেখে গিয়েছিলো সেই স্থানে আসা মাত্রই রাত ২টায় ইকবাল তাকে পিছন থেকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরদিন ২৪ এপ্রিল বিষয়টি জানাযানি হলে ইকবাল রাজধানী ঢাকায় আত্মগাপেনে চলে যায়।
পরে র্যাবের একটি দল ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ইকবালকে গ্রেপ্তার করে। আটককৃত ইকবালকে বিকেলে কোতয়ালী থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
ইবাংলা / জেএন / ২৬ এপ্রিল, ২০২২