দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণ ধরতে ভিটে-মাটি বিক্রি করে কেউ যেন আর প্রবাসের পথে পাড়ি না জমান সে জন্য যুব সমাজকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সঙ্গে তিনি বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণ ও গৃহকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেন সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নেয় তা নিশ্চিত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সব মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন…গোল্ডেন মনির গ্রেফতার, মনিরের সহযোগী হায়দার আলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শতবর্ষ টিটিসিসহ ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) উদ্বোধন অনুষ্ঠান করে। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পাসপোর্ট দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম বাজার খুঁজবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় সার্টিফিকেট দেবে আর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় মানুষ প্রেরণ করবে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
এসব কাজের জন্য প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে একটি কমিটি করে নিজ উদ্যোগে কাজ করতে হবে। তাহলে সবগুলো কাজ এক জায়গায় বসে সহজেই করা সম্ভব হবে। তিনি এর সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়কেও যুক্ত করার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন…পাবিপ্রবি’তে সমাজকর্ম বিভাগের সেমিনার অনুষ্ঠিত
সরকার প্রধান এ সময় দালালের খপ্পরে প্রবাসের পথে পাড়ি না জমান সে জন্য যুব সমাজকে সতর্ক করে বলেন, দালালের মাধ্যমে গেলে তারা বিপদে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকেই তাদের উদ্ধার করতে হয় অথবা ভূমধ্যসাগরে তাদের সলিল সমাধি হয় (অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসন খুঁজতে গিয়ে)। এটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বিদেশে যাবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখানে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা রয়েছে।
সরকার যে টিটিসি করে দিচ্ছে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নেয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।
‘উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি ও একটি আইএমটি স্থাপিত হলে মোট ১০৪টি টিটিসি এবং সাতটি আইএমটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এছাড়া মোট প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতা বছরে নয় লাখে উন্নীত হবে।
তাছাড়া সরকারের প্রায় ২৩টি মন্ত্রণালয় থেকেই কোনো না কোনভাবে জনশক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তাছাড়া সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে তারাও রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। এটাকেও মূল রেমিটেন্সের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
সরকার সবসময় বিদেশগামী কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৩ বছরে ৫৫টি নতুন শ্রম বাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
যেখানে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে হয়রানিসহ নানা অভিযোগে অনেক জায়গাতেই শ্রম বাজার কমে আসে। সে সময়কার সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করে তার সরকার বিদেশগামী শ্রমিকদের হয়রানি অনেকটাই লাঘবে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন…নড়াইলে ইভিএম-এ উপ-নির্বাচন
‘২০০৫-০৬ সালে জোট সরকারের বিদেশে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৫২ হাজার ৭০২ জন, আর রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে তা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এই সময়ে কর্মী প্রেরণ করা হয়েছে নয় লাখ ৬৬ হাজার ৫০৫ জন এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।’
প্রধানমন্ত্রী এই পরিসংখ্যান তুলে সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা এখন সমালোচনা করেন তাদেরকেই জবাবটা দিতে চাই। কারণ, তাহলে আর বিভ্রান্তি ছড়াতে পারবে না, তাদেরও হিসেবটা জানা উচিত তারা ক্ষমতায় থাকতে কি অবস্থা ছিল দেশে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন এবং বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে টিটিসি’র উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ইবাংলা/জেএন/২৮ জুলাই,২০২২