আম হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ৫টি ফলের অন্যতম এবং একে ক্রান্তীয় ফলের রাজা বলে ডাকা হয়। আম সুস্বাদু এবং কৃষকদের জন্য সমৃদ্ধির ফল। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম চাষি দেশ। আর গেল কয়েক বছরে চীনের নানা জায়গায় বৈশিষ্ট্যময় ফল চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পান চি হুয়া চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের ফলের বাস্কেট হিসেবে পরিচিত। এটি সি ছুয়ান প্রদেশের উপক্রান্তীয় ফলের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন এলাকা। পাশাপাশি, চীনা ৫টি কেন্দ্রীয় আম উৎপাদন এলাকার অন্যতম। রেন হ্য অঞ্চল হল পান চি হুয়া শহরের মূল আম উৎপাদন এলাকার অন্যতম, যা শহরের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত।
এখানে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি এবং রোদ তীব্রতর হয়। প্রতিবছর সূর্যালোকের সময় ২৭০০ ঘণ্টা এবং ৩০০ দিন হিমমুক্ত হয়। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ আম চাষের জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে অস্ত্র হাতে যুবলীগ নেতার ছবি ভাইরাল
জুলাই মাসে রোদ সবচেয়ে তীব্র হয় বলে খুব বেশি গরম পড়ে। রেন হ্য অঞ্চলে আমের ফলনে সময় এসেছে। কৃষক পু কুও পিং নিজের বাগানে আম পাড়ছেন। তিন বছর আগে তিনি কলমের মাধ্যমে নতুন এক প্রজাতির আম চাষ করেন। চলতি বছর এ আমের প্রথম ফলন হয়েছে ।
পু কুও পিং বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে তার বাবা থেকে আম চাষ শুরু করে তার পরিবার। মোট ০.৬৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ শুরু করে। তবে এখন তিনি ৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেন। এখন তিনি মোট ৭ প্রজাতির আম চাষ করেন এবং প্রতি প্রজাতির আমের পাকার সময়, স্বাদ এবং গুণগত মানও ভিন্ন।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে অস্ত্র হাতে যুবলীগ নেতার ছবি ভাইরাল
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিভিন্ন উচ্চতায় আম চাষ করার মাধ্যমে পু কুও পিংয়ের কেট আম অগাস্ট মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের আম দীর্ঘসময় ধরে বাজারে পাওয়া যায় বলে স্থানীয় কৃষকরা অনেক টাকা উপার্জন করেন।
বর্তমানে পু কুও পিংয়ের গ্রামে মোট ২,০০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এর মধ্যে ১,৪৬৬ হেক্টরের আমের ফলন হয়। ২০২১ সালে সারা গ্রামে আম উৎপাদন পরিমাণ ছিল ৫.২ কোটি ইউয়ান। আর প্রতিটি পরিবারের আম চাষের আয় ৬০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়েছিল। এর মধ্যে ৫০টি পরিবারের আম বিক্রির আয় ১০ লাখ ইউয়ানের বেশি ছিল। সারা গ্রামের মাথাপিছু নিষ্পত্তি-যোগ্য আয় ছিলে ২৪ হাজার ৬০০ ইউয়ান। এখন ছোট আম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তার বাবার তুলনায় পু কুও পিং নতুন ধরনের আম বেশি চাষ করতে চান।
আরও পড়ুন…বিএনপিকে হারিকেন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আহব্বান
গেল কয়েক বছরে বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে পু কুও পিং নানা নতুন ধরনের আম চাষ করেন এবং তিনি আশা করেন, নিজের পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সবচেয়ে উপযোগী আম খুঁজে পাবেন।পান চি হুয়া শহরে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমের ফলন হয়। তখন মোট ২০টিরও বেশি ধরনের আম পাকে। এর মধ্যে কোন কোন প্রজাতির আম গবেষণা প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রজনন করা হয়েছে।
পান চি হুয়ার কৃষি ও বনবিদ্যা একাডেমীর চাষ ঘাঁটিতে বিশেষ একটি এলাকা রয়েছে। সেখানে কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের আমের জার্মপ্লাজম সম্পদের সুরক্ষা কেন্দ্র অবস্থিত।
মোট ১.৬ হেক্টর জমিতে অবস্থিত এ কেন্দ্রে রক্ষিত আছে ২২০টি ভাল মানের আমের বীজ। গেল কয়েক বছরে বৈজ্ঞানিক কর্মীরা রপ্তানি, বাছাই ও লালন, ও প্রজননের মাধ্যমে ১০ ধরনের ভাল মানের আম আবিষ্কার করেন। চলতি ও আগামী বছর এ ঘাঁটিতে চাষ হবে নতুন ধরনের আম। পান চি হুয়া শহরের আম শিল্পের উন্নতির ভিত্তি তৈরি করেছে এ গবেষণালয়।
বর্তমানে পান চি হুয়ার আম রাশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কাজাখিস্তানসহ ১০টির বেশি দেশে রপ্তানি হয় এবং রপ্তানির পরিমাণ ২৫ হাজার টনের বেশি। সারা পান চি হুয়া শহরে আম চাষের আয়তন প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর এবং আমের বার্ষিক উৎপাদন পরিমাণ ৫.৪ লাখ টন, তার মূল্য ৩৮০ কোটি ইউয়ান।
আরও পড়ুন…একলাফে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বাড়ল
এখন আমরা আরেকটি আম চাষের এলাকা দেখতে যাব। কুয়াং সি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত এলাকার বাই স্যতেও শুরু হয়েছে আমের ফলনের সময়। চলতি বছর বড় রকমের ফলন হয়েছে। তাই সবার মুখে দেখা যায় হাসি। কৃষক চেন সাও ইউ বলেন, তিনি ২.৬৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেন।
আর চলতি বছর আম উৎপাদনের পরিমাণ হবে ২৫ হাজার কেজি। চেন সাও ইউ হলেন ইউং ল্য নামে একটি জেলার বাসিন্দা। আগে এখানে ছিল অনুর্বর পর্বত। ১৯৮৯ সালে এ গ্রামের সিপিসি সদস্যরা সবার আগে আম চাষ শুরু করেন এবং তাদের উদ্যোগে গ্রামের কিছু মানুষ ধনী হয়েছে। ২০১৫ সালে হুয়াং মা সিয়ান গ্রামের সিপিসি শাখার সাহায্যে আম চাষের কৌশল শিখতে শুরু করেন এবং এখন তিনি আম চাষের সামান্য বিশেষজ্ঞ। তার পরিবার ২ হেক্টর জমিতে আম চাষ করে এবং তাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ইউয়ান।
আরও পড়ুন…জবির সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিবেটিং ক্লাবের নেত্বতে আল-আমিন ও আসিফ
বাই স্য চীনের আম চাষের উৎস। আর এখানকার আম চাষের ইতিহাস ১,২০০ বছরের প্রাচীন। ১৯৮৫ সালে সিপিসির বাই স্য কমিটি ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় আম উৎপাদন কেন্দ্র।
আর আম চাষকে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনের মূল শিল্প হিসেবে নির্ধারণ করে। বাই স্য শহরের বৃহত্তম আম চাষ এলাকার তুং ইয়াং গ্রামের কৃষকরাও কাজে ব্যস্ত আছেন। চলতি বছর গ্রামে নির্মিত হয় আম বাছাই কেন্দ্র। আর সেখানে রয়েছে গভীর প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জাম। দেখতে সুন্দর না এমন আমকে শুকনো আম বা আমের জুসসহ নানা পণ্যে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
আরও পড়ুন…মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের আদর্শ ও চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান
বর্তমানে আম চাষ তুং ইয়াং গ্রামের মূল শিল্পে পরিণত হয়েছে। গ্রামে মোট ১,৫৩৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। আর প্রতিবছরের উৎপাদন পরিমাণ ২৮ হাজার টন। তার প্রভাবে আশেপাশের ৬টি গ্রামের ২,০০০ জনের বেশি কৃষকও আম চাষ করেন। ২০২১ সাল পর্যন্ত বাই স্য শহরে আম চাষের মোট আয়তন ছিল ৯০ হাজার হেক্টর।
বার্ষিক উৎপাদন পরিমাণ ছিল ৯.৩ লাখ টন। আমের উৎপাদন মূল্য ছিল ৫০০ কোটি ইউয়ান এবং ৫৪ হাজার টন আম নানা পণ্যে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। সারা শহরের ৪৯০টি গ্রাম আম চাষের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং ২ লাখের বেশি মানুষ আম চাষের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত হয়। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যবিমোচনে আম বড় ভূমিকা পালন করে। সূত্র: সিএমজি
ইবাংলা/জেএন/৬ আগস্ট,২০২২