হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর মতো সাধারন সম্পাদক পদে বহাল থেকে নির্বিঘ্নেই দল পরিচালনা করছেন ক্যাসিনোকান্ডে বিতর্কিত ৯ নং ওয়ার্ড, মতিঝিলের সাবেক যুবলীগ নেতা ও বহিস্কৃত কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদের প্রধান আস্থাভাজন আরামবাগের সাবেক যুবদলকর্মি ও ডিশ ব্যাবসায়ি মতিঝিল থানাধীন ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু।
ক্যাসিনো অভিযানে প্রশাসনের ধরপাকড়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট মতিঝিলের সন্ত্রাসী ক্যাডার ক্যাসিনো খালেদ গ্রেফতার হলেও সুকৌশলে বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় মতিঝিলের ৯ নং ওয়ার্ড এর বহিস্কৃত কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ। পালিয়ে যাওয়ার পরপর সাঈদের সাঙ্গপাঙ্গরা গা ঢাকা দিলেও এক অদৃশ্য শক্তির বলে প্রকাশ্যে থেকেই নির্বিঘ্নে পরিচালনা করছেন মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
বিদেশে পালিয়ে থেকেই ক্যাসিনো সাঈদ এলাকার চাঁদাবাজী থেকে শুরু করে বিচার-শালিসের নামে এখন পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মাইনুর মাধ্যমে। সাঈদের অবর্তমানে তার ক্যাডার বাহিনী আর চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে প্রশাসনের চাপ থেকে নিরাপদেই লালন পালন করছেন মাইনু।
ক্যাসিনো সাঈদের সাথে হটসআপে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে মাইনু। আসছে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদ পেতে ইতিমধ্যে জোর প্রচারনা আর তদবীর শুরু করেছেন তিনি। এতে সত্যিকার অর্থেই আতংকিত হয়ে পড়েছেন মতিঝিল থানাধীন ৯ নং ওয়ার্ডের (আরামবাগ-ফকিরাপুল) স্থানীয় এলাকাবাসীসহ প্রবীন ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মিরা।
ইতিমধ্যেই ঢাকা ৮ সাংগঠনিক টিমকে প্রভাবিত করে ৯ নং ওয়ার্ডের সার্চ কমিটিসহ ৬টি ইউনিটের প্রায় প্রতিটিতেই বিএনপি জামাতের লোকদের সভাপতি, সেক্রেটারি পদে বসাতে সক্ষম হয়েছেন মাইনু। আরামবাগ দক্ষিণ ইউনিটে এলাকার সুপরিচিত মাদকাসক্ত জহিরুল ইসলাম পাঠানকে সভাপতি ও যুবদল কর্মি কাশেমকে সম্পাদক, বঙ্গভবন ইউনিটে এলাকার সকলের পরিচিত জামাত কর্মি রফিকুলকে সভাপতি ও মতিঝিল থানার মাদক মামলার আসামী (মামলা নং ২৭) সোহেল খানকে সম্পাদক পদে আসীন করেছেন মাইনু।
সার্চ কমিটিতে যুবদল কর্মি শাহাজাদা তালুকদার, আশরাফ খোকন, ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক নিজের আপন ভায়রা মাহমুদুল হাসান তমালসহ এলাকার চিহ্নিত বিএনপি-জামাত কর্মিদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন মাইনু। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সার্চ ও ইউনিট কমিটিতে পদ পাওয়াদের বিএনপি-জামাত সম্পৃক্ততা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রমানসহ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে সুদুত্তর দিতে না পেরে কমিটি এখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা-৮ সাংগঠনিক টিমের সদস্য সচিব ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোর্শেদ কামাল।
আরও পড়ুন…কুড়ুলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যে!
যদিও গত ৭ জুলাই আইবি মিলনায়তনে প্রকাশ্যেই ইউনিট কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা করে ঢাকা ৮ সাংগঠনিক টিম। সাপ্তাহিক বার্তা বিচিত্রার সাংবাদিক এস আই খানের সাথে মোর্শেদ কামালের কথোপকথনের ঐ অডিও রেকর্ডের কপি হাতে এসেছে ই বাংলা ডট প্রেস কর্তৃপক্ষের।
এভাবে সকল ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করে মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু এখন ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ পেতে এগিয়ে যাচ্ছেন বেশ জোরেসোরেই। মাইনু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে এলাকার প্রবীন ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা আগামীতে রাজনীতি থেকে নিজেকে একপ্রকার সরিয়ে নিবেন বলে জানালেন এই প্রতিবেদকের সাথে। কে এই মাইনু ?
১৯৯১ সালে আরামবাগের জাতীয় পার্টির পরিত্যক্ত নেতা আবদুস সালামের ছত্রছায়ায় স্থানীয়ভাবে ডিশ ব্যাবসা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু এই মাইনুর। এলাকার সুপরিচিত যুবদল নেতা এস এম হায়দার বিপ্লবের সাথে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে তখন থেকেই জাতীয়তাবাদী যুবদলে নাম লেখায় মাইনু।
এরপর যুক্ত হন ফকিরাপুলের শিশু-কিশোর সংগঠন নোঙ্গর এর সাথে। নোঙ্গর এর প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরুল ইসলাম মল্লিক পিন্টু আর সমন্বয়ক আবদুল মান্নান ওরফে নোয়াখাইল্লা মান্নান ওরফে হকার মান্নানের সাথে সুকৌশলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে সুচতুর মাইনু। যাতে বিএনপির সময় খারাপ হলে আওয়ামী লীগের নৌকায় উঠতে বেগ পেতে না হয়।
আদতে হয়েছেও তাই। নোঙ্গর সভাপতি পিন্টুর হাত ধরেই ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মতিঝিলের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাশেম-সাব্বির পরিষদে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পদ বাগিয়ে নেয় মাইনু। একেএম মমিনুল হক সাঈদও ছিলেন এলাকার সাবেক যুবদল কর্মি।
মাইনু ও সাঈদ আওয়ামী লীগের নৌকায় উঠে এলাকার নিয়ন্ত্রন নিয়েই স্পোর্টিং ক্লাবগুলোতে শুরু করে জুয়া ও ক্যাসিনো খেলার। মাইনু-সাঈদের নের্তৃত্বে একপর্যায়ে আরামবাগ ক্লাব, ফকিরাপুল ইয়ং মেন্স ক্লাব সহ মোহামেডান ক্লাবেও ছড়িয়ে পড়ে জুয়া ও ক্যাসিনো। সাঈদ জুয়ার টাকায় যুবলীগের ছাতার নীচে আশ্রয় নিয়ে ১০ লাখ টাকা দিয়ে মাইনুকেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সেক্রেটারীর পদে আসীন করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন…আ. লীগের বঙ্গভবন ইউনিট কমিটির শীর্ষ পদে মাদক ব্যাবসায়ি ও জামাত কর্মী
আর সাঈদের ভবিষ্যত চিন্তা যে অব্যার্থ তার প্রমাণ এখনো প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে বহাল তবিয়তে নির্বিঘেœ আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড কমিটি পরিচালনা করছেন এবং ক্যাসিনো সাঈদের সকল কার্যক্রমকে চলমান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সম্প্রতি কারান্তরীণ ক্যাসিনো খালেদের পরামর্শে ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের নতুন কমিটিতে সাধারন সম্পাদক পদেও নাম লিখিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইব্রীড নেতা এই মাইনু।
মাইনুর যতো কুকর্ম
ফুটপাতের চাঁদাবজী থেকে শুরু করে আরামবাগ-ফকিরাপুলের ব্যাবসায়িদের বিচার শালিসের নামে হয়রানি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করা পর্যন্ত হেন কোন কুকর্ম নেই যেখানে মাইনুর নাম নেই। আওয়ামী রাজনীতিতে মাইনুর প্রধান অভিভাবক মতিঝিল থানার সাবেক সাধারন সম্পাদক এজিবি কলোনীর জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার অন্যতম সন্ধিগ্ধ ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-১ গোলাম আশরাফ তালুকদার।
গোলাম আশরাফ তালুকদারের প্রচ্ছন্ন আশীর্বাদে মাইনু আরামবাগের ৮৯/১ হোল্ডিং এর রাজাকার ভবনটিও মাসিক মাসোহারার চুক্তিতে জামাত নেতা শফিক মাইনুকে ভোগদখলের সুযোগ করে দেয়। ফুটপাতের চাঁদাবাজী, প্রেস ও কাগজ ব্যাবসায়িদের নানাবিধ বিচারের নামে হয়রানি করে জরিমানা আদায় ও রাজাকার ভবনের মাসোহারার টাকায় বিএনপি-জামাতের নেতা কর্মিসহ ক্যাসিনো সাঈদের সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়মিত দেখভাল করেন মাইনু।
কারা মাইনুর সহযোগি ?
মাইনুর অন্যতম আস্থাভাজন এলাকার চিহ্নিত যুবদল কর্মি শাহাজাদা তালুকদার, ছাত্রদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তমাল, মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই মির্জা শরীফের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফকিরাপুলের হোটেল ব্যাবসায়ি মুজিবুল হক খোকন যার বড় ভাইয়ের বাসা থেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর বিতর্কিত ব্যাবসায়ি গিয়াসউদ্দিন মামুনকে গ্রেফতার করা হয়।
তালিকায় আরো আছে ফকিরাপুলের কুখ্যাত রাজাকার ফেরু মেম্বার এর ভাতিজা রাসেল কামাল হোসেন। এই রাসেল কামালই ফকিরাপুল এলাকার ব্যাবসায়িদের বিচার শালিসের অন্যতম হোতা।
২০২০ সালের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ক্যাসিনো সাঈদের স্ত্রী বৈশাখীকে নির্বাচনে জয়ী করতে পাশাপাশি দলীয় অবস্থান ঠিক রাখতে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হকের মিটিং মিছিলে অংশ না নিয়ে ওয়ার্ড কার্যালয়ে বসে বসে গোপনে ক্যাসিনো সাঈদের স্ত্রী বৈশাখীর জয়ের জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে মাইনু। কিন্তু এলাকার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার সুবাদে মোঃ মোজাম্মেল হকের জয় ঠেকাতে ব্যার্থ হয় সাঈদ-মাইনু বাহিনী।
আরও পড়ুন…বৈশ্বিক কারণে খাদ্য সংকট ও বাজার অস্থিতিশীল
আসছে সেপ্টেম্বরে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে অন্যতম প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু। আরামবাগ-ফকিরাপুলের প্রবীণ ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের আশংকা অতীতের মতো যদি এবারো যদি মাইনু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন তাহলে আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা ৯ নং ওয়ার্ডে।
কেননা সেক্ষেত্রে ক্যাসিনো ডন সাঈদের এজেন্ডা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা অধিকতর সহজ হয়ে উঠবে মাইনুর মাধ্যমে। তাই ঢাকা ৮ সাংগঠনিক টিম ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দেখভালের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপসের কাছে এলাকার সত্যিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিরা এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে এ বিষয়ে সঠিক মূল্যায়নের আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। চলবে..
ইবাংলা/টিএইচকে/১৩আগস্ট,২০২২