লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার নুরুল্লাহপুরে মাদক ব্যবসায়ী কবির সোহেল গংদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অতিষ্ট এলাকাবসি। জানা গেছে দক্ষিণ নুরুল্লাপুর কাশেম মিজির বাড়ির মোঃ মনির হোসেন এবং তার পরিবার রেহাই পাচ্ছে না কবির গংদের ত্রাসের ছোবল থেকে। মাদক ব্যবসায়সহ ভূমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের একাধিক অভিযোগ উঠেছে কবির সোহেলদের বিরুদ্ধে। এক ভুক্তভোগি মনির হোসেনের বসতবাড়ি জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগও উঠেছে কবির গংদের বিরুদ্ধে।
একটি সূত্র বলছে, সদর উপজেলাধীন খাগুড়িয়া মৌজায় পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত মনির হোসেনের কিছু জমি রয়েছে যা বর্তমান সিটি জরিপসহ রেকর্ডভুক্ত এবং নিয়মিত খাজনাদি পরিষদ করা। এই জমির কিছু অংশে ঘরবাড়ি, কিছু অংশে সবজি বাগান ও জমি সীমানা নির্ধারণে গাছ লাগিয়ে এলাকার সকলের জ্ঞাতশারে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলে আছেন মনির হোসেনের পরিবার।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
ভুক্তভোগিরা বলছেন, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী মোঃ কবির হোসেন তার পিতার নামঃ মৃত ইসমাইল হোসেন । সে একই গ্রামের বাসিন্দা এবং তার সহযোগী মোঃ সোহেল আল-আমীনসহ একটি সন্ত্রাসী চক্র মনির হোসেনের কাছে চাঁদা চেয়ে আসছিল এলাকার উন্নয়নের কথা বলে। বেশ কয়েকবার চাঁদা দিয়ে সহযোগিতাও করেছিলেন মনির হোসেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন এটা তাদের চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অন্যতম একটি কৌশল।
মনির হোসেন বুঝতে পেরে পরবর্তীতে তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা মনির হোসেন এবং তার পরিবারকে জানমালের ক্ষতি করার হুমকিসহ নানা ধরণের উৎপাত শুরু করে। এ বিষয়ে কবির হোসেনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন মনির হোসেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কবির হোসেন গং মামলা হামলা করে মনির হোসেন এবং তার পরিবারকে দুর্বিষহ করে তোলে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে। মনির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং হামলা মামলার এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ভয় দেখিয়ে তাদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে ।
কবির হোসেনের অনুসারী সংঘবদ্ধ সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মনির হোসেন ও তার পরিবারের উপরে হামলা করে এবং তার বসতবাড়ির উপরও ককটেল, বোমা সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ করেন রাতের আধারে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যনার জাহাঙ্গির হোনে রাজুর কাছে জানালে চেয়ারম্যান কবির গংদের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগিদের বলেন, “তোমাদের গায়ে তো কোন ককটেল লাগেনি”।
ইউপি চেয়ারম্যানের এমন আশকরামূলক সখ্যতায় কবির গং মনির হোসেনদের জমি দখল করে নেয়ার পায়তার শুরু করে এবং জোর জবরদস্তি করে মনিরদের বাড়ির নারকেল গাছ কেটে ফেলে। এরপর মনির হোসেন এর বাড়ির লোকজন এবং গ্রামের লোকজন এহেন কর্মকান্ডে তাদের বাধা দেওয়ার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে । কিন্তু কবির বাহিনীর কাছে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। গ্রামবাসিদের অনেকে আহত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কবির হোসেন এলাকায় এরকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রায়শই পরিচালনা করে থাকে এবং শুধু মনির হোসেন না তার নির্যাতনের বলি অনেকেই হয়েছেন। আরো জানা যায়, চন্দ্রগঞ্জ থানার অন্যতম সুপরিচিত মাদক ব্যবসায়ী এই কবির হোসেন এবং তার আরেক সহযোগী মোঃ সোহেল। এরা এলাকায় মারামারি-হানাহানি, অন্যের জমি জায়গা দখল করা, মাদক ব্যবসা এবং এহেনও কাজ নেই যা তারা করেনা। কবির গংদরে এহেন সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ দিশেহারা এবং এর থেকে পরিত্রাণ চায় স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে নুরুল্লাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির হোসেন রাজুর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কবির সোহেল নামে কাউকে চিনি না। পরবর্তীতে প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, কবির হোসেন আমার আদালতে মনিরদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কিন্তু তার আমার ইউপি আদালতে হাজির না হওয়ায় এ ধরণের ঘটনা ঘটছে।
আরও পড়ুন…বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারি
আরেক সূত্রে জানা গেছে মনির হোসেনদের দখলে থাকা জমির কিছু অংশ কবির গংরা দাবি করে আসলেও তাদেরকে উপযুক্ত প্রমাণস্বরূপ কাগজ দেখাতে বললে কবির গংরা কোন প্রকার কগজ বা প্রমানাদি দেখাতে অপরাগ। একই সঙ্গে চেয়ারম্যান মনির হোসেনদের বলেন, তোমার কাগজ দেখার দরকার কি বলে জানায় ভুক্তভোগিরা।
ইউপি আদালতে কবির হোসন কর্তৃক মনিরদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে মনির হোসেন বলেন, যে বিষয়ে চেয়ারম্যানের নিকট আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এই বিষয়ে আদালতেও একটি মামলা করেছিলো কবির হোসেন। বিজ্ঞ আদালত সেই মামলা আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন। তারা বলেন, যে বিষয় বিজ্ঞ আদালত মিমাংশা করেন সেই একই বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে মামলা দিলে তার গুরুত্ব কতটুকু?
আরেক নির্ভরযোগ্য এক সূত্রে জানা গেছে কবির গংরা চেয়ারম্যানের যোগসাজেশেই এলাকায় মাদক ব্যবসায়, অন্যের জমি কিংবা সরকারি খাস জমি দখল বাণিজ্যসহ নানা ধরণের সন্ত্রসী কাজ করে যাচ্ছে। যেন কেউ এর প্রতিবাদ করার নেই।
ইবাংলা/টিএইচকে/২১আগস্ট,২০২২