দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত। প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি দেখা না গেলেও ভেতরে ভেতরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। সে রকমই একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ‘বিএনপি জোট’ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সেই বক্তব্যের ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা, কৌতূহল ও প্রশ্ন দেখা দেয়।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এরপর থেকেই মূলত ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয়। নেই কোনো যুগপৎ আন্দোলন। তবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেও জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি
বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেন জামায়াতের আমির।তবে জামায়াতের অন্য নেতারা বলছেন, জোটের বিষয়ে তারা আগের অবস্থানেই আছেন। নতুন করে কিছু ঘটেনি।
এ বিষয়ে জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আমিরের বক্তব্য অনানুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত। জামায়াত জোট ছাড়েনি।’
আরও পড়ুন…ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে জবি শিক্ষার্থী
জামায়াতের আরেক নেতা আব্দুল হালিম বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী আছে, জোট ছাড়েনি। আমাদের ঘরোয়া একটি বৈঠকে তিনি (আমির) যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তাতে এমন কোনো ঘোষণা ছিল না।
জোটের যে গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বিএনপি সেটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই আমির তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন।’
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে বিএনপির ১২ নেতাকর্মিসহ গ্রেফতার
এদিকে জামায়াতের আমিরের জোট ছাড়ার ঘোষণা বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি বিএনপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্যও করেননি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে দলটির সিনিয়র নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যার যার অবস্থানে থেকে যুগপৎ আন্দোলন হবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য বাম-ডান, মধ্যপন্থি, ইসলামিপন্থি সব দল যার যার অবস্থান থেকে এ আন্দোলনে শরিক হবেন। তিনি তার (জামায়াত আমির) বক্তব্যে এটিই বুঝিয়েছেন।’
আরও পড়ুন…বাকশাল নিয়ে বিরোধীদের আয়নাবাজি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। জামায়াতের আমির সেখানে দলীয় অবস্থান জানিয়েছেন। আমরা এখন সেটিকেই আমলে নেব।’
এদিকে জামায়াতের জোট ছাড়ার বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে।
জামায়াতে ইসলামী বলেছে, বিএনপির সঙ্গে তারা আর নেই। বিএনপি নৈরাজ্য করে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। নৈরাজ্য করলে ছাত্রলীগ বসে থাকবে না।’
আরও পড়ুন…ডেপুটি স্পিকার হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন শামসুল হক টুকু
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে জামায়াতের আমিরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে।
২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এ জোটকে কার্যকর করার কোনো চিন্তা নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথচলা।
তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ। আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সাথে তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন…নড়াইলের জেনারেশন-২১ গরীব শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাই কেবল নয়, মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় দলের একাধিক শীর্ষ নেতা আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েছেন।
দলটির সাবেক আমিরসহ পাঁচ শীর্ষ নেতার ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। আদালত এসব মামলার রায় ঘোষণার সময় জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন…গুচ্ছের ‘গ’ ইউনিটে পাস ৫৯.৪৫ শতাংশ
এদিকে, ২০০৯ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি ইসলামপন্থি সংগঠনের ২৫ নেতার এক আবেদনের পর হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
সেই রুলের শুনানি শেষে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশন থেকেও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। নিবন্ধন না থাকায় দল হিসেবে জামায়াত কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।
তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক হয়ে একটি সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে দলটি। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশ নেন।
ইবাংলা/তরা/২৯ আগস্ট ২০২২