আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ প্রকল্পের আওতায় কমবেশি দুই লাখ ইভিএম মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতি ইউনিট ইভিএম-এর প্রাথমিক দর প্রায় ২ হাজার ৪০০ ডলার পড়বে বলে ইসি সচিবালয়কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ১৯টি জেলায় ওয়্যারহাউজ নির্মাণ এবং মেশিন পরিবহণে পাঁচ শতাধিক গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হচ্ছে এ প্রকল্পে। এসব মিলিয়ে ব্যয় আট হাজার কোটি টাকার বেশি হবে।
আরোও পড়ুন……তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
এমনটি ধরেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির কাজ শুরু করেছে ইসি সচিবালয়। প্রকল্প ব্যয়ের বেশির ভাগই বিদেশি মুদ্রা ডলারে পরিশোধ করা হবে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ ডিপিপির খসড়া প্রস্তুত করতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিপুল অঙ্কের ডলার ব্যয়ে ইভিএম কেনার বিষয়ে নেতিবাচক মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, সরকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু পণ্যের আমদানিও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
এছাড়া ইসির সঙ্গে সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইলেকট্রনিক মেশিনে ভোটগ্রহণের বিপক্ষে মত দিয়েছে। এ অবস্থায় ইভিএমে ভোটগ্রহণ এবং দুই লাখ মেশিন কেনা কতটা যৌক্তিক হবে, তা বিবেচনার কথা বলেন।
দেশে আর্থিক সংকট চলাবস্থায় ইভিএম কেনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন ও আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। দেশের বিদ্যমান আর্থিক সংকটের মধ্যে নতুন ইভিএম কেনার উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইসি ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়ার কথা বলছে।
দেশে এমনিতে আর্থিক সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এসব মেশিন কিনে কেন অনাস্থার জায়গা তৈরি করছে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, ইভিএম যতই ত্রুটিমুক্ত হোক না কেন, এ মেশিনের ওপর বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও মানুষের আস্থা নেই।
এদিকে ইভিএম প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে যুক্ত তিন কর্মকর্তা জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা বেড়ে ১২ কোটি দাঁড়াবে এবং এ কারণে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। এটা মাথায় রেখে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এ হিসাব অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে দেশে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে কমবেশি ৪২ হাজার। ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে ওইসব আসনে কেন্দ্র থাকবে ২১ হাজারের বেশি।
এ পরিমাণ কেন্দ্রে ভোটকক্ষ হবে ১ লাখ ৭৫ হাজার। প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যাকআপসহ ভোটকক্ষের সংখ্যার ১৫০ শতাংশ ইভিএম রাখা হয়। তারা বলেন, প্রাথমিক এমন ধারণা সামনে রেখে দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পে এই প্রথম ইভিএম সংরক্ষণ ও পরিবহণ খাতে আলাদা করে অর্থ ধরা হচ্ছে। সোমবার নির্বাচন ভবনে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের সভাপতিত্বে ডিপিপি তৈরি সংক্রান্ত এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। ওই সভায় ইভিএম-এর বাজারদর যাচাই করে দ্রুত ডিপিপি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিপিপি প্রণয়নে আমরা একটি বৈঠক করেছি। ওই বৈঠকে ইভিএম-এর বাজার দর যাচাই করে ডিপিপি প্রণয়ন করতে পরিকল্পনা শাখাকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ইভিএম প্রকল্পে ব্যয় কত হবে, তা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। তবে দুই লাখ ইভিএম কেনার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭১ জন ভোটারের জন্য ৪০ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্র এবং ২ লাখ ৬ হাজার ৪৮৭টি ভোটকক্ষ ছিল। ওই নির্বাচনে ৬টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই আসনগুলোয় ভোট পড়ার হার কম ছিল। এবার প্রাপ্যতা সাপেক্ষে অনধিক ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
যদিও ইসির সঙ্গে সংলাপে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করেছিল। ওই বিরোধিতার মধ্যেই ইসি নতুন করে ইভিএম কেনার পদক্ষেপ নিল। ইসি দাবি করছে, ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্ভব।
আরোও পড়ুন……প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যা থাকছে
ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কাগজের ব্যালটে ভোট হলে প্রতি ৫০০-৬০০ জন ভোটারের জন্য একটি কক্ষ করা হয়। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলে প্রতি ৪০০-৪৫০ ভোটারের জন্য একটি করে কক্ষ করা হয়। এর কারণ হিসাবে তারা জানান, ভোটার শনাক্তে আঙুলের ছাপ না মেলা, যথাযথ ভোটার প্রশিক্ষণ না থাকাসহ নানা কারণে এ মেশিনে ভোটগ্রহণে ধীরগতি হয়।
ওই পরিস্থিতি বিবেচনায় কাগজের ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে কমসংখ্যক ভোটারের জন্য ভোটকক্ষ তৈরি হয়। এতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বেড়ে যায়। এ কারণে ইভিএম প্রকল্পে প্রতিটি কেন্দ্রে সাতটি করে ভোটকক্ষ থাকবে-এমন হিসাব করে মেশিন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।