মধ্য-শরৎ উৎসব প্রাচীনকালে চাঁদের পূজা ও প্রশংসার ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত। এই দিনে, চীনারা পারিবারিক পুনর্মিলনের আয়োজন করে, চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করে, মুনকেক খায়, দূরে থাকা স্বজনদের স্মরণ করে এবং ভালো ফসলের জন্য প্রার্থনা করে। মধ্য-শরৎউৎসবে চীনারা তাদের জন্মভূমির প্রতি গভীর অনুভূতিও প্রকাশ করে।মধ্য-শরৎ উৎসব, মুন ফেস্টিভ্যাল নামেও এটি পরিচিত। এটি চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে ইয়াবাও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার ৪
“সবাই দীর্ঘায়ু হোক। একে অপরের কাছ থেকে অনেক দূরে হলেও, আমরা এখনও একসাথে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।“ এই শ্লোকটি প্রায় এক হাজার বছর ধরে আবৃত্তি করা হচ্ছে। এটি যেন চীনা জনগণের আন্তরিকতা ও ধার্মিকতার বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতিফলন। আশা করি, এই পৃথিবীতে প্রত্যেকের স্বজন নিরাপদ ও সুস্থ থাকবে এবং একে অপরের কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও সুন্দর চাঁদের আলো উপভোগ করতে পারবে।
হাজার হাজার পরিবারের পুন:র্মিলন,আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে দেখা করা, একসাথে ভালো জিনিস কামনা করার এই উৎসব প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এ উৎসব পরিবারে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, বন্ধুত্ব ও মৈত্রী জোরদার করে।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে নরসুন্দরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা জাতির এই আধ্যাত্মিক প্রতীকটিকে আন্তরিক ও হৃদয়গ্রাহী করে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে, মানুষ কাজের জন্য খাওয়া ও ঘুম ভুলে যায় এবং তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য সর্বত্র চষে বেড়ায়। কিন্তু তাদেরকে হৃদয়ের অনুভূতির কথা ভুলে গেলে চলবে না; সংগ্রামের সময়ও প্রকৃত ভালোবাসাকে অবহেলা করা যাবে না।”
“পরিবারে সম্প্রীতি থাকলে সবকিছুতেই সফল হওয়া যায়; দেশ সমৃদ্ধ হলে জনগণ শান্তিতে থাকে।“ মধ্য-শরৎ উৎসব হলো একটি পারিবারিক পুন:র্মিলনের উতৎসব। সি চিন পিং সবসময় পরিবার, পারিবারিক শিক্ষা ও পারিবারিক শৈলীর ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে, “পরিবার হলো জীবনের প্রথম শ্রেণীকক্ষ এবং পিতামাতা হলো শিশুদের প্রথম শিক্ষক।”
২০০১ সালের ১৫ই অক্টোবর সি চিন পিংয়ের বাবার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী ছিল। পুরো পরিবারের জন্য একটি বিরল পুনর্মিলনের সুযোগ সৃষ্টি হয় তখন। সি চিন পিং তখন চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাই তিনি কাজে ব্যস্ততার কারণে পারিবারিক অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। সি চিন পিং লজ্জিত হয়ে তার বাবাকে এটি শুভেচ্ছা-চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি তাঁর পিতামাতার প্রতি তাঁর “গভীর” অনুভূতি তুলে ধরেন।
তিনি লিখলেন: “গত রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। আপনার জন্মদিনের কথা ভেবে আমি উদ্দীপিত; আবার বাড়ি আসতে না-পারায় অনুতপ্ত।” পিতামাতার প্রতি তাঁর ভালোবাসা অফুরন্ত। সময়ের সাথে সাথে এ অনুভূতি ও ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে… চিঠিতে তিনি অনেক মহৎ গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন যা তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন।
আরও পড়ুন…দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে টানা কর্ম বিরতি
সি চিন পিংয়ের মা শৈশবে তাকে ইউ ফি’র গল্প পড়ে শোনাতেন। তাঁর পিতামাতার প্রভাব এবং তাঁর পারিবারিক শৈলীর প্রভাবে সি চিন পিং সর্বদা চীনা জাতির সূক্ষ্ম ঐতিহ্যের বাহক। তিনি সবসময় দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি অনুগত। তিনি বিশ্বাস করেন যে, পারিবারিক স্টাইল ভালো হলে পরিবার সমৃদ্ধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। পারিবারিক ধরন খারাপ হলে তা বংশধরদের জন্য অনিবার্যভাবে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং সমাজের ক্ষতি করবে।
তিনি বলেন, “সব পরিবার সম্প্রীতিপূর্ণ হলে সমাজও স্থিতিশীল হবে; পরিবার সুখী হলে সমাজ শান্তিপূর্ণ হবে এবং পরিবার সভ্য হলে সমাজও সভ্য হবে।”
“বাড়ি দেশের ক্ষুদ্র সংস্করণ; দেশ লক্ষ লক্ষ বাড়ি নিয়ে গঠিত।” “একটি মহান দেশের মহত্ত্ব থাকে। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, এটি হাজার হাজার পরিবারের বিষয়।” তাঁর ২০২২ সালের নববর্ষের বার্তায় তিনি লিখেছিলেন। এদে তাঁর আন্তরিক অনুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘হাজার পরিবার ভালো হলে, শুধু দেশ ভালো হবে না বরং জাতিও ভালো হবে।’ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎও ভাগ্যের সঙ্গে প্রত্যেক পরিবারের ভবিষ্যৎও ভাগ্য অতপ্রোতভাবে জড়িত বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
দেশের সমৃদ্ধি, জাতির পুনরুজ্জীবন, ও মানুষের সুখ শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার পরিবারের সুখ ও কোটি কোটি মানুষের জীবনের ক্রমাগত উন্নতিতে প্রতিফলিত হয়। সি চিন পিংয়ের মনে করেন, হাজার হাজার পরিবারের সমৃদ্ধি ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণে।
আরও পড়ুন…বশেমুরবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ
“উজ্জ্বল চাঁদ উঠছে সমুদ্রের ‘পরে; দূরের সবাই একই মুহূর্ত উপভোগ করছে।“ আজকের ঐতিহ্যবাহী মধ্য-শরৎ উৎসব উপলক্ষ্যে আসুন আমরা আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উপভোগ করি এবং কামনা করি সবার মঙ্গল। আপনি ও আপনার প্রিয়জনেরা আবার পুনর্মিলিত হবেন, আপনার পরিবারের সবাই সুস্থ থাকবে-এই হোক আজকের দিনের প্রত্যাশা।সূত্র: সিএমজি
ইবাংলা/জেএন/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২