বিশৃংখলা আর নিজেদের গুনকীর্তনেই প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘নূরা পাগলার মতো ছাগল-পাগলের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর আমাদের এতো এতো নামী-দামী লোকের অনুষ্ঠানে তারা আসেনা, নিউজও করেনা।’ জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রীর ৭৬তম জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন ‘বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের সভাপতি জহির উদ্দিন মবু।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক কর্ণেল (অব:) কাজী শরীফ উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতার নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ না বলে বারবার শেখ মুজিবুর রহমান বলায় আগত দর্শকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন বিরক্ত হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন. তিনি এমনভাবে বলছিলেন যে বঙ্গবন্ধু যেন তার জুনিয়র কোন কর্মচারী। মঞ্চে উপস্থিত অতিথিরা কিভাবে কিভাবে এটা সহ্য করলো বুঝতে পারছিনা।

আরও পড়ুন..তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান

সরেজমিন উপস্থিত থেকে দেখা যায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও অতিথিরা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের চেয়ে ছবি তোলাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। অতিথিদের বক্তব্যে কারো মনোযোগ তো ছিলইনা পাশাপাশি অতিথিদেরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনাদর্শন আলোচনা বাদ দিয়ে নিজেদের জাহির করে বক্তব্য রাখতে শোনা যায়। ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান মূল ব্যানারে লেখা থাকলেও এ বিষয়ে অতিথিদের কাউকেই কিছু বলতে শোনা যায়নি।

উল্টো ‘মেট্রোরেল প্রকল্পকে’ পাতাল রেল বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক কর্ণেল (অবঃ) কাজী শরীফ উদ্দীন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে ৫ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার যোগ্যতা না থাকলে কি আমি সেখানে সুযোগ পেতাম? দর্শকদের মন্তব্য, ‘এই সেনা কর্মকর্তা ৫ বছরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কি কাজ করেছেন এবং সেই কাজগুলি দেশের উন্নয়নে কি অবদান রেখেছেন সে বিষয়ে আমরা শুনতে চেয়েছিলাম। এছাড়া কাজী শরীফ উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গিয়ে বারবার ‘শেখ মুজিব’ সম্বোধন করায় আগত দর্শক ও সাংবাদিকদের মধ্যে উশখুশ শুরু হয়।

আরেক বিশেষ অতিথি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ধানমন্ডি-২ এর প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি পুষ্টিটা ভালো বুঝি তাইতো আমি পুষ্টিবিদ। একজন মানুষের সারাদিনে ৫/৬ চামচ তেল লাগে। তাহলে তেলের দাম বাড়লে কি আসে যায়?’ তার এ কথায় দর্শকদের মাঝে চাপা অসন্তোষ এবং গুঞ্জন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের পুষ্টি প্রাপ্তির জন্য কি ধরনের উদ্যোগ নিয়ে দেশবাসীর কল্যান করেছেন সে বিষয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারন করলেননা। তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে পুষ্টির কি সম্পর্ক সেটাও পরিষ্কার করে বললেননা।

শুধু বললেন তেলের দাম বাড়লে এমন কি আসে যায়? যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিও জন্য জেলায় জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা থেকে শুরু করে টিসিবির মাধ্যমে বাজার দামের প্রায় অর্ধেক দামে সাধারন মানুষকে তেল কেনার সুযোগ কওে দিচ্ছেন তা নিয়ে তিনিতো কিছুই বললেননা।’এমনই মন্তব্য করতে শোনা যায় দর্শকদের।

একপর্যায়ে বিটিভর ক্যামেরা এসে অতিথিদের ভিডিও ধারন করতে শুরু করলে সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীরা মঞ্চে অতিথিদের পিছনে দাঁড়ানো শুরু করলে মঞ্চে চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। সবাই ক্যামেরাতে ফোকাস হওয়ার জন্যই পাগলের মতো অতিথিদের পিছনে গিয়ে দাঁড়াতে শুরু করেন। ঐ বিশৃংখলার মধ্যেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রম আপীল ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ ফারুক তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন।

নিয়ম ভেঙ্গে এর আগে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠন সভাপতি জহির উদ্দীন মবু তার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। ঐ বক্তব্যে তিনি বলেন, আউল-ফাউল অনুষ্ঠানে, নূরা পাগলার মতো ফালতু লোকের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর আমাদের এতো এতো নামী-দামী লোকের অনুষ্ঠানে তারা আসেনা, নিউজও করেনা। সাংবাদিকদের কোন রুচী আছে বলে মনে হয়না। বিটিভিকে ধন্যবাদ তারা এসেছেন। তারা আমাদের ছবি তুলবেন। মূলত তার এই কথার পরপরই সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলে দলে মঞ্চে ওঠা শুরু করে।

সংগঠনের সদস্যদের সেলফি তোলার হিড়িক আর আলোচনার ধরন দেখে আগত দর্শকবৃন্দ সংগঠনটিকে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহারকারী ধান্দাবাজী সংগঠন বলে অভিহিত করেন। সংগঠনের নেতারা নিজেদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বলে নিবন্ধিত বলেও দাবী করেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই নামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী সংগঠনের স্বীকৃতি নেই।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক কাজী শরীফ উদ্দীনের বঙ্গবন্ধুকে শুধু শেখ মুজিব বলে সম্বোধন প্রসংগে সংগঠন সভাপতিকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি আরো উদ্ধত হয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, উনাকে কি প্রধানমন্ত্রী এমনি এমনি সাথে রেখে ৫ বছর কাজ করেছেন’?

ইবাংলা/টিএইচকে

জন্মদিন পালনপ্রধানমন্ত্রীর