আখের জাত উদ্ভাবন করেছে বিএসআরআই

উপজেলা প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) দেশের অন্যতম প্রাচীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এখানে আখসহ মিষ্টি জাতীয় ফসলের উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবন ও বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গবেষণা করা হয়। আখের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে এদেশের মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের উৎস চিনি ও গুড় তৈরির শিল্প। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আখের পাশাপাশি সুগারবিট, তাল, খেজুর, গোলপাতা, মধু ও স্টিভিয়া প্রভৃতি মিষ্টি জাতীয় ফসলের ওপর গবেষণা করে আসছে।

বিএসআরআই কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৫১ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএসআরআইয়ের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এর আগে ১৯৩১ সালে ঢাকার মনিপুরীপাড়ায় এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত আখের ৪৮টি জাত উদ্ভাবন করেছে বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে তিনটি চিবিয়ে খাওয়া সুস্বাদু আখের জাত রয়েছে।

আরও পড়ুন…শ্রীপুরে বিদেশী মদসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

আখের জাতগুলো চিনিকল এলাকার ৯৯ শতাংশ ও চিনিকল বহির্ভূত এলাকায় ৬৫ শতাংশ হিসাবে এক লাখ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে। আখ ছাড়াও দু’টি সুগারবিটের জাত, একটি বারোমাসি তালের জাত ও একটি স্টেভিয়ার জাত এ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করেছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বিস্তার শ্রেণিতে বিএসআরআই ১৪২০ বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক লাভ করে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৯৫ হাজার ৫০০ খেজুর গাছ, ৮৮ হাজার তালের চারা রাস্তা ও নদীর বাঁধের ধারে রোপণ করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫ হাজার ১০০ টি প্রদর্শনী ও গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আখ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২১৫০ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ১৭ হাজার ১৬০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে বিএসআরআই সারাদেশে তিনটি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৯টি উপকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৮৩ বিজ্ঞানী, ৩৯৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১১৬ শ্রমিক কর্মরত আছেন।

আরও পড়ুন…‘প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু না কিছু ঘটেছে’

খামার ইনচার্জ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সঞ্জিত মণ্ডল জানান, বিএসআরআই ২৩৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে চাষাবাদযোগ্য জমি ১৫৮ একর। গবেষণা ও খামার বিভাগ এ জমিতে আখ, তাল, স্টিভিয়া, সুগারবিট, খেজুরসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় ফসলের চাষ ও গবেষণা করে থাকে। বিশেষ করে আখের জাত ঈশ্বরদী-৩৪, ঈশ্বরদী-৩৭, বিএসআরআই-৪১ থেকে বিএসআরআই ৪৬ পর্যন্ত জাতগুলো এখানে সর্বোচ্চ পরিমাণে চাষাবাদ করে বীজ উৎপাদন করা হয়। এখানকার উৎপাদিত পরিচ্ছন্ন ও উন্নত বীজ দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হয়।

তাল কর্মসূচির পরিচালক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাইয়ুম হোসেন জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি আখের পাশাপাশি অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের ওপর গবেষণা করে যাচ্ছে। এরমধ্যে তাল অন্যতম। ২০১৭ বিএসআরআই তাল-১ নামে একটি জাতের নিবন্ধন করেছি। এ জাতের ১ লাখ ২০ হাজার চারা উৎপাদন করেছে। শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়। এ বছর ১ লাখ ৫০ হাজার চারা উৎপাদন করা হয়েছে। তালের রস দিয়ে গুড় ও তাল মিশ্রি তৈরি করা হয়। তালের চারা উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

মৌমাছি ও মধু কর্মসূচির পরিচালক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এলমুর রেজা জানান, ২০১৭ সাল থেকে এখানে মৌমাছি ও মধু গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুই জাতের মৌমাছি নিয়ে এখানে গবেষণা করা হয়। এপ্রিস মেলিফেরা ও এপ্রিস সেরেনা। প্লাস্টিক ও কাঠের বাক্সে এ মৌমাছিগুলোর গবেষণা চলছে। এ মৌমাছি যেন সহজে খাবার সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য শত শত ফুল গাছ ও শাপলা লেক করা হয়েছে। শাপলা ও পদ্মফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। এখানকার মৌমাছি চাষ নিয়ে গবেষণা চলছে। উদ্ভাবিত মৌমাছি চাষের পদ্ধতি সাধারণ মৌমাছি চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা খুব সহজে মধু উৎপাদন করতে পারবে।

বিএসআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, চিনিশিল্পের উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আখের ৪৮টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ জাত বিএসআরআই- ৪৮। এ জাতটির সর্বোচ্চ চিনি ধারণের ক্ষমতা শতকরা ১৫ ভাগের বেশি। এই জাত সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হলে চিনিশিল্পে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন…প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাঃ নিশ্চিত হচ্ছে শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিপূর্ণ পূর্ব প্রস্তুতি

তিনি বলেন, আখের পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানে তাল, গোলপাতা, যষ্টিমধু, খেজুর, স্টিভিয়া, মধু, সুগারবিটসহ মিষ্টিজাতের ফসল নিয়ে গবেষণা চালিয়ে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিবছরই লাখ লাখ তালের চারা উৎপাদন করে দেশজুড়ে বিতরণ করা হচ্ছে।

এছাড়া আখের সঙ্গে সাথী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আখ চাষকে আরও লাভজনক করেছে বিএসআরআই। আখের সঙ্গে একই জমিতে আলু, সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকদের লাভবান করার পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে সাথী ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইবাংলা/জেএন/০৫ অক্টোবর ২০২২

বিএসআরআই