বান্দরবানের দূর্গম, অনগ্রসর ও সরকারী স্কুল দূরবর্তী এলাকায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে অবদান রেখে আসছে পাড়া কেন্দ্রগুলো। শুধু প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানই নয়, কিশোর-কিশোরী ও নারীরাও সেবা পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের পাড়াকর্মীদের মাধ্যমে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে বান্দরবানে পরিচালিত হচ্ছে ১হাজার ৬শ পাড়াকেন্দ্র।
আরও পড়ুন…সোনালী ব্যাংক পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
বাংলাদেশ সরকার এবং দাতা সংস্থা ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বান্দরবানে শুরু হয় ১৯৯৬-৯৭ সালে। আগামী জুনে এই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। মাঝপথে এর কার্যক্রম থেমে গেলে পার্বত্য অন্য দুটি জেলার ন্যায় বান্দরবানের দূর্গম ও দরিদ্র এলাকায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
সরেজমিনে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং, গজালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পাড়াকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে শিশুদের কোলাহলে মেতে উঠে এখানকার পাড়া কেন্দ্রগুলো। কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে কর্মদন ও বুকে জড়িয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করান পাড়াকর্মীরা।
এরপর কেউ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী নিয়ে খেলছে, কেউ ছড়া আবৃত্তি আবার কেউ গানে গানে নৃত্য করছে। এই যেন আনন্দে উচ্ছাসে মেতে উঠা। কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, শিশুদের উৎসাহব্যঞ্জন পাঠদান। একই চিত্র জেলার আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি, রুমা, রোয়াছংড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলার পাড়াকেন্দ্রগুলোতেও।
ফাইতং ইউনিয়নের ফিল্ড অর্গানাইজার (এফও) জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, পাড়াকেন্দ্রে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি পাড়াকর্মীরা পাহাড়ের অনগ্রসর এলাকায় মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি ও পয়: ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধসহ নানা বিষয়ে সামাজিক পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন…হঠাৎ পেটে সমস্যা প্রস্তুতি ম্যাচে নেই রোনালদো
দক্ষিণ নয়াপাড়া কেন্দ্রের পাড়াকর্মী জেবুন্নেচ্ছা জেবা জানান, তাদের কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের প্রাক-শৈশব স্তরে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তত করে তোলা হয়। কুতুবদিয়াপাড়া কেন্দ্রের পাড়াকর্মী সাবিনা ইয়াছমিন এবং ওই কেন্দ্রের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: শফি জানান, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তাদের পাড়াকেন্দ্রের শিশুরা স্কুলেও মেধার স্বাক্ষর রাখছে।
এদিকে পাহাড়ে কয়েক যুগ ধরে প্রাক-প্রাথমিকে আলো ছড়ানো পাড়াকেন্দ্রর স্থায়ীত্ব চান এলাকার মানুষ। কারণ মাঝপথে এর কার্যক্রম থমকে গেলে বান্দরবানের হাজার হাজার শিশু ও নারী বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। জানতে চাইলে দক্ষিণ নয়াপাড়া কেন্দ্রের প্রাক্তন ছাত্রী ফারজানা আক্তার বিথি জানান, ‘পাড়াকেন্দ্র তার প্রথম স্কুল ও জীবনের প্রথম হাতেখড়ি’। এখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে সে এখন বান্দরবান সরকারী কলেজে অধ্যয়নরত। তারমতো দূর্গম ও অনগ্রসর এলাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থী পাড়াকেন্দ্র থেকে উঠে এসেছে।
মাঝপথে এর কার্যক্রম থমকে গেলে দূর্গম এলাকায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ তৃণমুল পর্যায়ে মৌলিক সেবা প্রদান কার্যক্রম থমকে যাবে বলে মনে করেন ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জোবাইর হোসেনও। প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ে লামা উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক রেজাউল হক, জানান- পাড়াকেন্দ্রেগুলোর মাধ্যমে শুধু শিক্ষা দান’ই নয়। টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার জনগোষ্টির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মৌলিক সেবার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ এবং মা ও শিশুদের জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে আসছে পাড়াকর্মীরা।
আরও পড়ুন…সরকার কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে না
টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের বান্দরবান জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক আলুমং মার্মা জানান- বান্দরবানের সাত উপজেলায় ১হাজার ৩শ পাড়াকেন্দ্রে বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯হাজার ৬শ জন। আর এই কেন্দ্রগুলো পরিচালনায় ১৩০জন ফিল্ড অর্গানাইজার (এফও)সহ ১হাজার ৩০০ পাড়াকর্মী কর্মরত রয়েছেন।
ইবাংলা/জেএন/১৭ নভেম্বর ২০২২