বিজিবি-বিএসএফ আইজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন সমাপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র রিজিয়ন কমান্ডারস (চট্টগ্রাম, সরাইল ও কক্সবাজার রিজিয়ন এবং ময়মনসিংহ সেক্টর) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)’র ফ্রন্টিয়ার ইন্সপেক্টর জেনারেলস (ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরাম ও কাচার ফ্রন্টিয়ার)-এর মধ্যে ৩ দিনব্যাপী (০৭- ০৯ ডিসেম্বর ২০২২) সীমান্ত সম্মেলন আজ সমাপ্ত হয়েছে।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতের আগরতলায় সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়। বিজিবি’র দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়ন, চট্টগ্রাম এর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তানভীর গনি চৌধুরী (Brigadier General Tanveer Gani Chowdhury)-এর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে, বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল শ্রী সুমিত শরণ, আইপিএস (Shri Sumit Sharan, IPS)-এর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনের শুরুতে বিএসএফ প্রতিনিধিদলের প্রধান ইন্সপেক্টর জেনারেল শ্রী সুমিত শরণ, আইপিএস বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য বিজিবি ও বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি কার্যকর ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (CBMP) বাস্তবায়নে উভয় বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিজিবি প্রতিনিধিদলের প্রধান তানভীর গনি চৌধুরী সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভুমিকার কথা উল্লেখ করে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি-১৯৭৫ অনুসরণ এবং কার্যকরভাবে CBMP বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

তিনি উভয় বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়েছে:
সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় যৌথটহল পরিচালনা, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী আরও বেগবান করা এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বিশেষ করে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ও নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ইত্যাদি পাচার রোধ, স্বর্ণ, অস্ত্র ও গরু চোরাচালান রোধে উভয় বাহিনীর মধ্যে তাৎক্ষণিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান এবং এ ধরনের অপরাধ এর সাথে জড়িত ও আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

সীমান্তে চোরাচালান ও মানব পাচার রোধে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ টহল বৃদ্ধির বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। আন্তর্জাতিক সীমানা লংঘন করে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম/অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবৈধ ও অননুমোদিত নির্মাণকাজ না করার ব্যাপারে এবং বন্ধ থাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজগুলো পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।

উভয় পক্ষই বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখতে এবং পারস্পারিক আস্থা বৃদ্ধির জন্য প্রীতি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন সেমিনার/সিম্পোজিয়াম/ওয়ার্কশপ আয়োজন করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

সম্মেলনটি সুষ্ঠেুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় উভয় প্রতিনিধিদলের প্রধান অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

ইবাংলা/টিএইচকে