যুদ্ধজাহাজ ডুবিতে ৬ ক্রুর মরদেহ ইদ্ধার, নিখোঁজ ২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে একটি থাই যুদ্ধজাহাজ ‘এইচটিএমএস সুখোথাই’ ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। এই যুদ্ধজাহাজ ডুবিতে ৬ নাবিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ঝড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে ১০৫ জন ক্রু নিয়ে জাহাজটি ডুবে যায়। উদ্ধারকারী দল এখন পর্যন্ত ৭৬ জনকে উদ্ধার করতে পেরেছে।

উদ্ধারকৃতদের মধ্যে একজন নাবিক ছিলেন যাকে সমুদ্রে দুইটি উত্তাল রাত কাটানোর পর মঙ্গলবার জীবিত উদ্ধার করা হয়। জাহাজটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

ছয়টি মরদেহ উদ্ধারের পর থাইল্যান্ডের উপসাগরে ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নিখোঁজ ২৩ জন নাবিকের জন্য অবিরাম অনুসন্ধান চলছে। মঙ্গলবার উদ্ধার অভিযানে থাই নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর কয়েকশ সদস্যের পাশাপাশি নৌবাহিনীর চারটি জাহাজ ও বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হয়েছে।

দেশটির নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল চোনলাথিস নাভানুগ্রহ বলেন, ‘জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ৪১ ঘণ্টা পর আমরা একজন জীবিতকে উদ্ধার করেছি। তাই আমরা বিশ্বাস করি, সেখানে এখনও জীবিত মানুষ আছে। আমরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাব।’

এর আগে নৌবাহিনীর এক কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল পিচাই লোরচুসাকুল বলেছিলেন, ‘সমুদ্রে নিখোঁজদের জীবিত উদ্ধার করতে সর্বোচ্চ দুই দিন সময় রয়েছে। লাইফ জ্যাকেট, বয় এবং তাদের (নাবিকদের) উচ্ছ্বাস কৌশল তাদের জীবন বাঁচাতে আমাদের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়। তাই মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় আছে। আমরা তাদের উদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’

তার বক্তব্যের পরে বেশ কয়েকজন ক্লান্ত ক্রুকে উদ্ধার করা হয়েছিল এমনকি কয়েকজন অচেতন অবস্থায় ছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ক্যাপ্টেন কোরাই-পেপারভিট জানিয়েছেন, মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া নাবিক একটি বয়ায় ভাসছিল।

তিনি জানান, উদ্ধার ওই ব্যক্তির জ্ঞান আছে। মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছেন তিনি। অনেকক্ষণ ধরে সমুদ্রের পানিতে থাকায় তার চোখ জ্বলছিল। একটি ভেলা থেকে বেশ কয়েকজন নাবিককেও উদ্ধার করা হয়েছে। নাবিকরা ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে ভেলায় উঠে যায়।

৭৬ মিটার লম্বা কর্ভেট ‘এইচটিএমএস সুখোথাই’ রোববার রাতে দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ডের পূর্ব অংশে নিয়মিত টহল দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে ঝড়ের কবলে পড়ে। ঝড়ের সময় জল জাহাজের হুল এবং পরে পাওয়ার কন্ট্রোল রুমে প্রবেশ পানি করে, ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যর্থ হয়ে যায়।

অন্যান্য একাধিক নৌ জাহাজ খবর পেয়ে ছুটে আসে, কিন্তু শুধুমাত্র ‘ফ্রিগেট এইচটিএমএস’ ক্রাবুরি সম্পূর্ণভাবে ডুবে যাওয়ার আগে ‘এইচটিএমএস সুখোথাই’ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়। থাই নৌবাহিনী পরে জানিয়েছে, তারা আগে কখনও এমন পরিস্থিতিতে একটি জাহাজ হারায়নি। তারা জাহাজডুবির তদন্তের ঘোষণাও দিয়েছে। ৭৬ মিটার লম্বা কর্ভেট ‘এইচটিএমএস সুখোথাই’ রোববার রাতে দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ডের পূর্ব অংশে নিয়মিত টহল দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে ঝড়ের কবলে পড়ে।

কারণ, নিয়মিত টহল দেওয়ার সময় জাহাজের এমন বিপর্যয়কে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন অনেক নৌ বিশেষজ্ঞ। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক নৌআইন বিশেষজ্ঞ ডেভিড লেটস জানান, ঘটনাটি ছিল সত্যিই অস্বাভাবিক কারণ জাহাজের অনেক বগিতে জলরোধী দরজা রয়েছে যাতে ইঞ্জিন রুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে পানি প্রবেশ না করে।

এটা বিশ্বাস করা হচ্ছে, রাতে বিপর্যয়ের সময় অনেক নাবিক সম্ভবত ঘুমিয়ে ছিলেন এবং পরবর্তী বিশৃঙ্খলায় লাইফবোট বা ভেলা সরানোর নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। কীভাবে জাহাজে পানি ঢুকল এবং কেন নাবিকরা জলে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হল তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মার্কিন নেভাল ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থানীয় কোম্পানি দ্বারা নির্মিত এই ‘এইচটিএমএস সুখোথাই’ ১৯৮৭ সালে থাই নৌবাহিনীতে যোগ দেয়।

ইবাংলা/টিএইচকে