মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে না পেরে মানুষ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। ব্যাংকে কমে যাচ্ছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। অক্টোবর শেষে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে ৭ শতাংশে নেমে গেছে, যেখানে গত বছরের অক্টোবরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত আগস্টে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আর গত অক্টোবরে তা আরো কমে নেমেছে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশে। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। শুধু মূল্যস্ফীতির হিসাবে নিলে ব্যাংকে টাকা রেখে গ্রাহকের লোকসান হচ্ছে প্রতি ১০০ টাকায় প্রায় ৫ টাকা।
আরও পড়ুন…বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ভলিবল চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
অর্থাত্ ১০০ টাকা রেখে এক বছর পর প্রায় ৫ টাকা ক্ষয় হয়ে পাওয়া যাচ্ছে ৯৫ টাকা। এভাবেই গ্রাহকের অর্থ ব্যাংকে রেখে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যেখানে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার অবমূল্যায়িত হয়েছে এক বছরে প্রায় ২৮ শতাংশ, সেখানে ব্যাংকে আমানত রেখে প্রকৃত আয় না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সমন্বয় না হওয়ায় মানুষ তাই ব্যাংকে জমানো অর্থ উত্তোলন করে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছর অক্টোবরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যেখানে প্রায় ১১ শতাংশ; চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে তা কমে এসেছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশে। চার মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানত এসেছে যেখানে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল ৩৭ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমানত কমে যাওয়ার এ অস্বাভাবিকতা অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। এটা থামানোর জন্য অর্থনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমানতের সুদহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে চাহিদা কমাতে ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তবে ব্যাংক ঋণের সুদ হার বেড়ে গেলে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেন, সুদ হার এই মুহূর্তে বেড়ে গেলে সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব আনতে পারে। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকেও সুদ হার বৃদ্ধি না করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন…নড়াইলে ২ গরুচোরকে পিটিয়ে হত্যা
কারণ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাজারে পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগের জন্য অর্থের চাহিদা কমে গেলে সেটি কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য সঞ্চয় বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে মানুষের প্রকৃত আয় বাড়াতে হবে। কারণ মূল্যস্ফীতির হার আমানতে সুদ হারের চেয়ে বেশি হলে সেটি সঞ্চয়ে প্রভাব ফেলে। মানুষের প্রকৃত আয় কমে যায়। এজন্য মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটাতে না পারলে কর্মসংস্থানে গতি আসবে না।
ইবাংলা/জেএন/২৬ ডিসেম্বর, ২০২২