শিশু বড় হয়ে কেমন মানুষ হবে? তার অনেকখানিই নির্ধারিত হয়ে যায় তার শৈশব ও কৈশোরেই। একটা বয়স পর্যন্ত মা-বাবা বাচ্চাকে অতিরিক্ত আহ্লাদ-আদর দেন। এরপর সন্তান যখন বয়ঃসন্ধির বয়সে পা দেয়, তখন থেকে শুরু হয় সমস্যা। মা-বাবা সন্তানের বয়সের নানা ধাপের সঙ্গে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে পারেন না অনেক সময়।
আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতার মৃত্যু
বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের মতপার্থক্য হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু অনেক সময় তা কথা কাটাকাটির পর্যায়ে চলে গেলে বাবা-মার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিকমতো সামাল দিতে না পারলে এই কথা কাটাকাটি ভয়ংকর রূপ নেয়। বাড়ে ভুল বোঝাবুঝি। বাবা-মার সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কথা কাটাকাটি এড়িয়ে কিভাবে সম্পর্ক আবার ঠিক করবেন সে বিষয়ে রইলো কিছু পরামর্শ:
ভুলেও খারাপ ভাষা ব্যবহার করবেন না
একসময় বাবা কিংবা মা শাসনের সময় গালাগাল করতেন। তখন সন্তানরা অনেকটা ভয় এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে সয়ে যেত। সম্প্রতি সন্তানদের মধ্যে এই প্রবণতা আর নেই। আজকাল তারা এসব দেখে এমন কথা বলা শিখে ফেলে। চিৎকার চেঁচামেচি আপনার সন্তান মেনে নিলেও গালাগাল তার মনে গভীর আঁচড় ফেলে দিতে পারে। তাই মেজাজ হারাবেন না। বরং আলোচনা ঘুরেফিরে ফেলবেন।
উত্তপ্ত আলোচনায় কারণ খুঁজুন
হচ্ছে তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু তর্কের মধ্যে প্রশ্ন করুন এবং কারণগুলো খুঁজে বের করুন। আপনি যেহেতু অভিভাবক তাই আপনাকেই মানিয়ে নিতে হবে। আপনি দোষারোপ করবেন না। দোষারোপের শিকার হলে তা ভাঙানোর চেষ্টা করবেন।
সন্তানের দিকটি ভাবুন
নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, চলাফেরার ধরন নিয়ে কথা বলবেন না। আপনার সন্তানের সময়, অবস্থা, পরিবেশ, মন-মানসিকতার দিকটিও ভেবে দেখা জরুরি।
সন্তানের কাজের ধরন দেখুন
আপনার সন্তানের কোনো কাজ আপনার কাছে ভালো নাই লাগতে পারে। তবে তার কোনো কাজের যৌক্তিক কারণ থাকলে প্রথমে দেখুন। যদি খুব বড় ভুল করতে নেয় তখন তাকে দিকনির্দেশনা দিন। তাকে খারাপ পরিণতি কি হতে পারে শান্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
আলোচনার সুযোগ রাখুন
এতকিছুর পরও ঝগড়া এড়াতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে আলোচনার সুযোগ রাখবেন। তারা যেন ভুল বুঝতে পারলে কোনো দ্বিধা ছাড়াই আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে। মনে রাখবেন, আপনি অভিভাবক। আপনাকেই পরিবেশ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ব্যর্থতা মেনে নিতে শেখান
একটা কথা মনে রাখতে হবে, আপনার অসীম নিরাপত্তার ছায়ায় আস্তে আস্তে বড় হওয়া আদরের সন্তানটিকে বড় হওয়ার পর অবশ্যম্ভাবীভাবেই জীবনের নানা জটিল পথ পার হতে হবে। সফলতার সঙ্গে সঙ্গে নানা ব্যর্থতাও তার জীবনে আসবে। শিশুর বর্তমানের ছোটখাটো ব্যর্থতা স্বাভাবিকভাবে নিন এবং তাকে সহজভাবে মেনে নিতে শেখান। এ ছাড়া শিশুর চাহিদার সবটাই সব সময় পূরণ করার প্রয়োজন নেই। জীবনে আমরা যা চাই, যেভাবে চাই তার কিছু ঘটবে, কিছু ঘটবে না—এই সত্য, এই বোধ সে আপনার কাছ থেকেই একটু একটু করে জানবে।
ইবাংলা/জেএন/২৮ ডিসেম্বর, ২০২২