করোনা মহামারি-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার ধ্বনি জোরালো হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। দেশের বাজারে দিন দিনই তীব্র ডলার সংকট। এ সংকট নিরসনে উচ্চাবিলাসী পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংকট কাটাতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে প্রতিনিয়ত ডলার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মূলত, জরুরি আমদানি ব্যয় মেটাতেই রিজার্ভ থেকে এ সহায়তা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও কাটছে না ডলার সংকট।
তবে চলমান ডলার সংকটের মধ্যেই ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে) ২০ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকার বেশি। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসে ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারের বেশি। আগের মাস ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন…দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ তানভীরকে সংবর্ধনা
রেমিট্যান্স প্রবাহের একই ধারা বইছে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেও। এ মাসের প্রথম ১০ দিনে ৬৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
যা দৈনিক গড়ে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার বা প্রায় ৬৮৮ কোটি টাকার বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ফেব্রুয়ারিতে ২৮ দিনে রেমিট্যান্স ১৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে ডলার সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রায় ৮৫০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও অতীতে রিজার্ভ থেকে এতো পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি।
আরও পড়ুন…উরুগুয়েকে হারিয়ে শিরোপা ব্রাজিলের
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। রেমিট্যান্সে প্রণোদনাও বাড়ানো হয়েছে। এতে এখন বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। সামনে দুটি ধর্মীয় উৎসব (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা)। এ দুই উৎসব ঘিরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অর্থবছরের শুরুর দুই মাস দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আসে।
আরও পড়ুন…ঝড়ের আঘাতে হাজারো মানুষ বিদ্যুতবিহীন, রাস্তা-ঘাটে চলাচল বন্ধ
এরপর সেপ্টেম্বর থেকে কমতে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ। যা মাসিক হিসাবে দেড় বিলিয়ন বা তার কাছাকাছি চলে আসে। গত সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার। আর সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এলো ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
আরও পড়ুন…৩ বছর মেয়াদের ১ রেলপথেই ১৫ বছর!
এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
ইবাংলা/ জেএন/১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩