বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ ছাড়ে কমিশন বাণিজ্য দুবাই, মালয়েশিয়া অর্থ পাচারে সহযোগিতার ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে আবুল কাশেম ওরফে কমিশন কাশেমের প্রতি।
চট্টগ্রামের আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংক, মতিঝিল শাখার কতিপয় কর্মকর্তারা ‘কমিশন কাশেম’ নাম দিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ পাঠায়।
আরও পড়ুন…তারেক কানেকশন : আওয়ামী লীগে ভর করে হাশেম রেজার অস্বাভাবিক উত্থান
অভিযোগে বলা হয়, নোমান গ্রুপ এবং তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তা, বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ ছাড়ে কমিশন বাণিজ্য এবং দুবাই-মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারে সহযোগিতা করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন লোহাগড়া থানার আধুনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সিপাহী পাড়ার মরহুম আবদুর রশিদের ছেলে আবুল কাশেম।
বর্তমানে তিনি কলাবাগান মামা হালিমের গলি, ১৪২ নং এমএইচ ক্রিক লিয়ন (২য় তলা) ১নং লেক সার্কাসে পরিবারসহ বসবাস করছেন।
অভিযোগে বলা হয়, বিগত ১৪/১০/২০১৮- ইংরেজি তারিখ গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ৬৯৩৯ নং দলিলমূলে গুলশান এভিনিউ ১১৩নং রোডের ১১০নং প্লটের ২০ কাঠা জমি (দুইতলা পুরাতন বিল্ডিংসহ) কিনে নেন নোমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। দাতা মিসেস হামিদা হককে এজন্য ২শত কোটি টাকা মূল্য পরিশোধ করেন। ওই জায়গার নামকরণ করেন নুরুল ইসলাম হাউস।
ক্রয় করা সম্পত্তির উপর দুই তলা বিশিষ্ট পুরাতন ভবন ভেঙ্গে তদস্থলে বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে মর্মে ঋণ নিতে সংগঠনের সঙ্গে জড়িত শহীদুল্লাহ চৌধুরী এবং আবুল কাশেমের সহযোগিতা চান। ২০১৯ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মতিঝিল শাখার ঋণ শাখার কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ৫শ ৭০ সত্তর কোটি টাকার ঋণ নেন।
বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই ৫শ ৭০ সত্তর কোটি কোটি টাকা সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করে। এছাড়াও একই সম্পত্তি ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডসহ আরও একাধিক ব্যাংক থেকে প্রায় ২শ ৮০ কোটি টাকা নোমান ও তার অঙ্গ সংগঠনকে ঋণ পাইয়ে দেয় আবুল কাশেম।
মোট ৮শ ৫০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে বিগত ১৪/১০/২০১৮ ইংরেজি তারিখে রেজিস্ট্রি করা ৬৯৩৯ নং দলিলটাই জামানত হিসেবে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে বর্ণিত জমির উপর এখন পর্যন্ত সংষ্কার কাজ হয়নি এবং দলিলে বর্ণিত দুই তলা বিশিষ্ট পুরাতন ভবনটিই বহাল তবিয়তে আছে।
আরও পড়ুন…জামায়াতপুত্র হাশেম রেজা আ. লীগের উপকমিটির নেতা : জালজালিয়াতি হামলা-মামলাই যার নেশা
অভিযোগে আরও বলা হয়, নোমান গ্রæপের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম, পুত্র আবদুল্লাহ জাবের, জি.এম ফাইন্যান্স আবুল কালাম নান্টু, নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমদ চৌধুরী, শহিদুল্লাহ চৌধুরী এবং আবুল কাসেমের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিনস্থ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বিমা, লিজিং ও ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান থেকে জমির দলিল জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের ঋণ নেন।
ভুয়া কোম্পানি, ভুয়া কল-কারখানা এবং ভুয়া পরিচালক দেখিয়ে বক্তিগত ঋণ, কর্পোরেট ঋণ, সিসি ঋণ, বন্ড লাইসেন্সের বিপরীতে ঋণ এবং ঋণের উপরে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন আবুল কাশেম। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘুষ ও কমিশনের বিনিময়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার উপরে নোমান গ্রæপকে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন আবুল কাশেম। নোমান গ্রæপের মোট সম্পদের চাইতে ঋণের পরিমাণ বহুগুণ বেশী।
আবুল কাসেম তার নিজস্ব যোগাযোগ এবং ক‚টকৌশলে কমিশনের বিনিময়ে মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনস্থ একাধিক ব্যাংকের কাছ থেকে নোমান গ্রæপকে ঋণ পাইয়ে দেন। এসব কমিশন বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের ফলে অর্জিত আয়ে রহস্যজনকভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন আবুল কাশেম বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ১০/১২টি দোকানের মালিক আবুল কাশেম, যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকারও বেশি।
ঢাকার ফুলবাড়িয়া জাকির সুপার মার্কেট ও ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটে তার বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা, ধানমন্ডি কলাবাগান মামা হালিমের গলিতে ১৪২ নং হাউজের ২য় তলায় অত্যাধুনিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা, গুলশান-২ এলাকায় ২০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের জমি, বান্দরবানের লামা থানার আজিজনগর স্টেশনের রয়েলস টেক্সটাইল মিলস লি: যেখানে কোটি কোটি টাকার অত্যাধুনিক মেশিন, ছাড়াও একই এলাকায় ৪ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ২টি মার্কেট যথাক্রমে রয়েল মার্কেট ও কাসেম শপিং কমপ্লেক্স, বিশাল ডেইরী ফার্মসহ নামী দামী জায়গায় জমিসহ বহু সম্পদের মালিক এই আবুল কাশেম। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮শ ৫০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন…ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণে উড়ে গেলো শিশু আরিশার হাতের কব্জি
অভিযোগে আরও বলা হয় যে, আবুল কাশেম ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডোসহ বিভিন্ন নতুন মডেলের নিত্য নতুন গাড়ী নিয়ে চলাফেরা করেন। চট্টগ্রামের লোহাগড়া আধুনগর সিপাহীর পাড়ায় রাজপ্রাসাদের মত বাড়ি, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের নামে বেনামে অবৈধ উপায়ে ব্যাংক ব্যালেন্স ও সম্পদ আছে। যাহার কোনো হিসাব নেই।
অভিযোগে বলা হয়, কাসেম তার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহার করেন।
এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকেও একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগে বলা হয়েছে যে, আবুল কাশেমের পৈত্রিক সম্পত্তি, তার ব্যবসা থেকে অর্জিত আয় এবং বর্তমান সম্পদ ও জীবনাচরণের মধ্যে ফারাক বহুগুণ।
আবুল কাশেমের আয়, সেই বৈধ আয়ের ক্রয় করা সম্পদের সঠিক তথ্য এবং আয়বহির্ভুত সম্পদের হিসাব মেলালেই সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন অভিযোগ কারী।
এসব অভিযোগ নিয়ে আবুল কাশেম চৌধুরীর সঙ্গে ২৮ ফেব্রুয়ারি তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, কোনো সদুত্তর না দিয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরের দিন একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করে দ্বিতীয়বারেও কোনো সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
ইবাংলা/টিএইচকে