জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক সাবেরা সুলতানার দুইটি গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।
একটি সূত্রে বলা হয়, ভারতের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে (IOHR-JHSS) ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘Investigating American Romanticism: A Comparative Study’ (Volume 21, Issue 4, Ver.4 Apr.2016, PP 58-65) শিরোনামে ঐ প্রবন্ধটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেম্পা’র অধ্যাপক ক্যাথরিন ভ্যান স্প্যাংকেরেনের লেখা “Outline of American Literature” বইয়ের বেশ কিছু অংশের মিল থাকার প্রমাণ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
এছাড়া, ২০১২ সালের জুন মাসে দর্শন বিভাগের কপুলা জার্নালের ৪৭-৫৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সাবেরা সুলতানার ‘BIM, The Protagonist, in Anita Desai’s Clear Light of Day: An Embodiment of Emancipation’ নামে আরেকটি গবেষণা প্রবন্ধের বিভিন্ন অংশে চারজন ভারতীয় লেখকের বই থেকে লেখা হুবুহু কপি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিরুপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমাদের এসাইনমেন্ট বা থিসিস এ এক লাইনও যদি বইয়ের সাথে মিলে যায় তাহলে নাম্বার দেয়া হয় না। প্লেজিয়ারিজম বলা হয়, তিরস্কার করা হয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি করে তাহলে সব ভুল শুদ্ধ হয়ে যায়। তারা আবার এটা দিয়ে প্রমোশনও পায়। প্রশাসন আছেই শুধু ভবন বানাও, অবকাঠামো উন্নয়ন কর এগুলো নিয়ে। কিন্তু শিক্ষার উন্নয়নের কথা কেউ ভাবে না। আমরা যাদের কাছ থেকে শিক্ষা পাচ্ছি তারাই যদি চুরি করে প্রমোশন পায় তাইলে আমাদের সে কি পড়াবে সেটা আশা করি বুঝাই যাচ্ছে।’
আর একজন শিক্ষক জানান, ‘আসলে আমরা জানি কেন এই বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা কল্পনা করতে পারি না। ছাত্রদের ক্ষেত্রে এত কড়াকড়ি করা হয় অথচ দলের তেলবাজ শিক্ষকদের জন্য কিছুই না।
এর আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ সহ নিউজ হয়েছিল, এরপরেও যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের টনক না নড়ে তাহলে বুঝতে হবে প্রশাসনের শিক্ষার মান উন্নয়ন বা শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু করার ইচ্ছা নেই।’
কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কোনো তদন্ত করা হয় নি এ ব্যাপারে প্রশাসনের কারোর থেকেই কোনো সদুত্তর মিলে নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক কারণেই এগুলা এড়িয়ে যাওয়া হয়। আবার অনেক সময় অভিযোগ না পেলে প্রশাসন নাক গলাতে চায় না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কিছুই তো প্রশাসনের আয়ত্তের বাইরে থাকে। সব কিছুই উপর লেভেল থেকে ঠিক করা থাকে।