জন্মহার বাড়াতে বিয়ের খরচ কমাচ্ছে চীন

বজাতকের জন্য ভর্তুকি বৃদ্ধি করছে, কর্মীদের বিয়ের জন্য ছুটি দেয়ার প্রচারণা চালাচ্ছে

চীনে জন্মহার বাড়ানোর জন্য প্রথাগত বিয়ের খরচ কমানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। এমনিতেই চীনে বিয়ে এবং জন্মহার নিম্নমুখী। এরপর অর্থনৈতিক সংকটের সময় অতিরিক্ত খরচের কারণে বিয়েতে অনীহা অনেকের।

চীনে ঐতিহ্যবাহী বিয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি খরচের পেছনে রয়েছে উপহার বা কাইলি। এটি মূলত একধরনের পণপ্রথা। বিয়ের সময় বরপক্ষ আন্তরিকতাস্বরূপ উপহার কনেপক্ষকে দিয়ে থাকে। এসব বিয়েতে পরিবারগুলো উপহার হিসেবে হাজার হাজার ডলার প্রত্যাশা করে।

২০২০ সালে টেনসেন্ট নিউজ ১ হাজার ৮৪৬ জনের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বিয়ের ক্ষেত্রে এ প্রথা মেনে চলে।

আরও পড়ুন>> ছিনতাই হওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গাড়িসহ ৩ ট্রাঙ্ক টাকা উদ্ধার

চীনের জনসংখ্যার হার দ্রুত কমে যাওয়ায় আগের উদ্যোগগুলোই নতুন রূপে ফিরিয়ে আনছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, দেশটিতে জনসংখ্যার হার দ্রুত কমে যাওয়ার মানে হলো শ্রমশক্তিও সংকুচিত হওয়া। এতে ভোক্তাদের চাহিদা কমে যায় এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, দেশটিতে বর্তমান জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ১৮ লাখ। গত বছরের তুলনায় যা ৮ লাখ ৫০ হাজার কম। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, জন্মহার কমে যাওয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি এক হাজারে জন্মহার মাত্র ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এর আগে ১৯৬১ সালে চীনে কয়েক বছরব্যাপী মহাদুর্ভিক্ষের শেষ বছরে শেষবারের মতো জনসংখ্যা কমেছিল। এরপর ৬১ বছর পেরিয়ে ২০২২ সালে এসে দেশটির জনসংখ্যা কমল।

এই পরিস্থিতিতে চীনের পরিবার উন্নয়ন সংস্থার প্রধান স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে জন্মহার বাড়াতে উৎসাহ দেয়ার জন্য ‘সাহসী ও সৃজনশীল’ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন>>টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের হারিয়ে টাইগারদের ইতিহাস

বিয়ের বাড়তি খরচ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে খরচের কারণে বিয়েতে অনীহা জন্মহার কমার একটি মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল হেবেই প্রদেশে বিয়ের খরচের এ প্রথা ভাঙার উদ্যোগ শুরু হয়। এর মধ্যে কাইলি ও ওয়েডিং গেমও অন্তর্ভুক্ত। উপকূলীয় জিয়াংসু প্রদেশের একটি কাউন্টিতে ‘সবচেয়ে সুন্দর শাশুড়ি’ খোঁজার জন্য গত মাসে একটি প্রচারণা শুরু হয়। যিনি বিয়েতে খুব বেশি অর্থ নেবেন না, তিনিই হবেন ‘সবচেয়ে সুন্দর শাশুড়ি’।

গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়াংজির একটি শহরে অবিবাহিত নারীদের একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে তারা বিয়েতে বিপুল পরিমাণ কাইলি না চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই প্রদেশের রাজধানীতে বুধবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে একটি গণবিয়ের আয়োজন হয়েছে। এ বিয়ের স্লোগান‘আমরা যৌতুক নয়, কনের সুখ চাই’।

আরও পড়ুন>>বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা কিনা তদন্ত চলছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

চীনে জন্মহার বাড়াতে আরো নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা নবজাতকের জন্য ভর্তুকি বৃদ্ধি করছে, কর্মীদের বিয়ের জন্য ছুটি দেয়ার প্রচারণা চালাচ্ছে এবং অবিবাহিত দম্পতির সন্তানদের নিবন্ধনের অনুমতি দিতে নিয়মের কঠোরতা শিথিল করছে।

তবে এ ধরনের পদক্ষেপগুলো পুরুষদের পক্ষে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার বক্তব্যে নারীদেরকে রাজনীতির শীর্ষে ক্ষমতার বাইরে রেখে প্রথাগত ভূমিকায় ফিরে যেতে উত্সাহিত করেন।

সূত্র: ব্লুমবার্গ

ইবাংলা/এসআরএস