গর্ভধারণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাবে কখনো দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা। আর সেটাই হয়ে উঠতে পারে মা ও সন্তানের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। তবে প্রশ্ন হচ্ছে— গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের যত্নের কতটুকুই বা জানি আমরা। গর্ভাবস্থায় সব ধরনের খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এ সময় খাবারের বিষয়ে অধিক সচেতন হতে হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণ আকস্মিকভাবে হলেও, আজকাল তার পরিমাণটা অনেকটাই কম। বর্তমানে অনেককেই দেখা যায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিতে। সেই প্রস্তুতির মধ্যে সঠিক খাবার পছন্দ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন গর্ভধারণের কয়েক মাসের মধ্যে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনলেই চলবে। কিন্তু না। সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মায়ের সুস্থতার ওপর। আর মায়ের সুস্থতা নির্ভর করছে সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের ওপর। তাই সন্তানধারণের আগে ও পরে মায়ের সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন>> ১৯ বছরের সংসার ভেঙে গেলো অভিনেত্রীর
তবে চলুন দেখে নেওয়া যাক সন্তানধারণের আগে-পরে মায়ের খাওয়া উচিত এমন কিছু খাদ্যের তালিকা।
আমিষ: গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। শুধু গর্ভাবস্থায় না গর্ভধারণের আগে থেকে এসব খাবার গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সন্তান ধারণকালে ও প্রসবকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণ আমিষের চাহিদা তৈরি হতে পারে। তাই গর্ভধারণের আগে থেকেই খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ সমৃদ্ধ খাবার রেখে আপনার একটি সুন্দর গর্ভকালীন সময়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর তাই খাদ্যতালিকায় যোগ করুন মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, দই, পনির ইত্যাদি। তবে, মাথায় রাখবেন কাঁচা বা কম রান্না হওয়া খাবার মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ফলিক এসিড: ফলিক এসিড শুধু মায়ের জন্য নয়, সন্তানের জন্যও উপকারী । ফোলিক এসিড প্লাসেন্টার দ্রুত কোষ বৃদ্ধিতেই সহায়তা করে, শিশুকে গর্ভে থাকাকালীন জন্মগত ত্রুটির থেকে রক্ষা করে, এটিই হলো গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি নির্ধারিত করার প্রধান কারণগুলোর একটি কারণ। প্রাকৃতিকভাবে, ফোলিক অ্যাসিড ফোলেটের আকারে পাওয়া যায় যা গাঢ় রঙের পাতাযুক্ত সবজি, গোটা শস্য, ডাল এবং কমলালেবুর মতো কিছু খাবারের মধ্যে উপস্থিত। বরবটি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, গাজর, শিম, মটরশুঁটি, লেবু, পাটশাক, পুঁইশাক, সরিষা, সূর্যমুখীর বীজ, লাল চাল ও লাল আটায়ও ফলিক এসিড আছে। তাই গর্ভধারণের আগে ও পরে এসব খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
আরও পড়ুন>>মাহে রমজানের প্রস্তুতি
ক্যালসিয়াম: সাধারণত, মহিলাদের গর্ভধারণের আগে, গর্ভাবস্থায় ও পরে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা তৈরি হয়। প্রথম ত্রৈমাসিকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং স্নায়ুর গঠনের বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম গ্রহণের ফলে মায়ের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। ফলমূলসহ অনেক ধরনের খাবারের মধ্যেই ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। দুধ, দই, সবুজ শাকসবজি, বেগুন, শালগম, ঢেঁড়স, সয়াবিন, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাবার যথেষ্ট ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।
আয়রন: গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা অনুভব করা খুব স্বাভাবিক। যখন আপনার আয়রনের মাত্রা হ্রাস পায়, তখন লোহিত রক্তকণিকা আপনার দেহের টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন বহন করতে অক্ষম হয়। এটি গুরুতর হলে শিশুকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আপনার গর্ভাবস্থায় যখন আপনি আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা অনুভব করেন তখন রক্ত আপনার শরীরের টিস্যুগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন বহন করতে পারে না। আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গর্ভধারণের আগে থেকেই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারেন। যেমন—সামুদ্রিক মাছ, ডিম, কলিজা, শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় খাবার, পালং শাক ও শাক জাতীয় খাবার, ডার্ক চকোলেট, ফুলকপি ইত্যাদি।
আরও পড়ুন>>রাজধানীসহ দুই বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা
ভিটামিন-ডি: গবেষণায় জানা গেছে—ভিটামিন-ডি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যেসব মায়েদের ভিটামিন মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে কম থাকে, তাদের বাচ্চার মস্তিষ্ক দুর্বল হয়। এছাড়া, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-ডি থাকলে এটি গুরুতর প্রিক্যালম্পসিয়ার ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম করতে পারে। ডিম, চিজ, বিফ, লিভার ইত্যাদি ভিটামিন ডি যোগায়। এছাড়া, প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের আলো অনেক বড় ভিটামিন ডি-এর উৎস হতে পারে।
এসব ধরনের খাবারের পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে যে, কোনো খাবারের কারণে যেন অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি না পায়। গর্ভধারণের আগে ও পরে অত্যধিক ওজন উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সন্তানধারণের পর্যায়টি প্রত্যেকটি মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের জন্য কোনো ঝুঁকির সম্মুখীন না হওয়াই ভালো। আর তাই গর্ভধারণের আগে ও পরে আপনার খাদ্যতালিকায় উপরোক্ত খাবারগুলো যোগ করে মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করুন।
সুত্র: হেলথইন
ইবাংলা/এসআরএস