ব্যবসা ও বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের উদারতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশের ওপর সর্বো”চ গুর“ত্ব দিয়েছে। সেটি আরও সংস্কার ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নও হবে।
আরও পড়ুন… স্বামী হত্যার দ্বায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড
শনিবার (১১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন ছাড়াও সামিটের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’রও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলা রাজধানী ঢাকা এবং বাকি অংশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়।
বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, সেতুটি চালুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে শুধু রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি, এর ফলে দেশের অর্থনীতিও বেগবান হবে।
প্রকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের কাজ শুর“ হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সকলের সহযোগিতায় বর্তমান সরকার গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন…ধর্ষণের আলামত নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ চরজব্বার থানার ওসির বিরুদ্ধে
ব্যবসায়ীদের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা রাখার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা নিয়ে এগোনোর অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কোনো হতাশা শুনতে চাই না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় বাংলাদেশ বন্যা-খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত পেত। এখন কিছু সে অবস্থা নেই। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। গত ১৪ বছরে আমরা বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি করোনাকালেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করেছি পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে করে।বেসরকারি খাতের বিকাশে সরকার সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার আমি বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এটা তখনকার যুগে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। আমি মনে করি, বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনীতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহিত করণের ওপর ভিত্তি করে আজকের এই অর্থনৈতিক টেকসই ও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্র“ততম বর্ধনশীল একটি দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি। এক সময়কার বাংলাদেশ দারিদ্রপিড়ীত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলে পরিচিতি পেত। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই।
আরও পড়ুন…গুলিস্তানে বিস্ফোরণে পুলিশের মামলা: ১১ এপ্রিল প্রতিবেদন
এখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।’ ‘অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, সকলের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে।’
করোনাকালেও বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সারা বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে, তখনো বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। কোভিডের পূর্বে ২০১৮ থেকে ২০১৯ অর্থবছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে উন্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’
‘কোভিড অতিমারি বা রাশিয়া যুদ্ধ ফলে যে অর্থনৈতিক মন্দা সেটা যদি না হতো তাহলে আমি আশা করি আমরা কিš‘ আরও অন্তত ২ থেকে ৩ ভাগ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হতাম।’-যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আরও পড়ুন…দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিজনেস সামিট
.বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরার লক্ষ্যে আজ থেকে শুর“ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যবসায়িক সম্মেলন।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ২০০ টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা শীর্ষ এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।