বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা মিথ্যা কথা বলে বলে আমাদের স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায়। তবে তারা এতে সফল হবে না, আমরা তা হতে দেব না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন…বরগুনায় বিএনপির মানববন্ধন মানবপ্রাচিরে পরিনত
বিরোধী দলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নাকি কিছুই করি নাই। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলে বিদেশে বসে রাজনীতি করে। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ দিয়েছি বলেই তো এত কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। তারা আমাদের সুযোগ ভোগ করে আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে।’
দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি, আমাদর এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। কৃষি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য সব হবে স্মার্ট। তৃণমূল পর্যন্ত মানুষ উন্নত জীবন পাবে।’
জনসভার আগে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা পাঠ করে শুনিয়ে সরকারপ্রধান জানান, এসব প্রকল্প ময়মনসিংহবাসীর জন্য তার সরকারের উপহার।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষকে উন্নয়ন উপহার দেয় আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নির্যাতন, দুর্নীতি হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন…ইসলামী ব্যাংক-রিয়া মানি ট্রান্সফার রেমিট্যান্স উৎসবে মোটরসাইকেল হস্তান্তর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিন বছর সাত মাস তিনদিন জাতির পিতা দেশ গড়ার সময় পেয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ার কাজ করেন। সংবিধান প্রণয়ন করেন।’ এ সময় তিনি অশ্রুসজল কণ্ঠে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট শহীদদের আত্মার মাঘফেরাত কামনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। আওয়ামী লীগের সভাপতি করার পর দেশে আসার সুযোগ হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটাই লক্ষ্য, আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুদা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য- তা বাস্তবায়ন করা।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি।’ এরপর উদ্বোধন করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প গুলো পড়ে শোনান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার মাসে ৭৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম, সেগুলো যতন করে রাখবেন।’ এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ৩০টি প্রকল্প পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত তখন লুটপাট, বোমা হামলা, জঙ্গিবাদ মানুষ হত্যার মতো কাজ করে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। বিএনপির ক্ষমতা থাকা মানে নির্যাতন, লুট করা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন উপহার দেয় আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নির্যাতন করে।
আরও পড়ুন…বশেমুরবিপ্রবিতে অতিরিক্ত বিল ভাগাভাগির কল রেকর্ড ফাঁস
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্যহার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। স্বাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশে বাড়িয়েছিলাম, বিএনপি সেটিকে নামিয়ে এনেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারই ময়মনসিংহ বিভাগ করে দিয়েছে। এটি চমৎকার একটি বিভাগ। শিক্ষা ও ফসল উৎপাদনে উন্নত একটি বিভাগ হবে এই ময়মনসিংহ। এখানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। একটি বিভাগের উপযোগী সব কাজ আমরা এখানে করে দেব। আরও আগেই করতে পারতাম। করোনাভাইরাসের কারণে প্রচণ্ড চাপ আসে। বিনা পয়সায় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশও যা পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অঞ্চলে বিএনপির আমলে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ছিল। এই ময়মনসিংহে চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়। প্রতিনিয়ত সারাদেশে বোমা হামলা। এটাই ছিল বিএনপির আমল। তাদের শাসন মানেই সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট। ওদের ক্ষমতায় থাকা মানেই মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার। আর আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। আর তারা ভূমি দখল করেছে। আমার মনে আছে, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়ি তারা দখল করে পুকুর কেটে গাছ লাগিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যাদের মাথা গোজার ঠাঁই নেই তাদের ঘর করে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৫ লাখ মানুষকে ঘরে দিয়েছি। আরও ৪০ লাখ মানুষকে ঘর করে দেব।’
আরও পড়ুন…রংপুরে বাস খাদে পড়ে ২ জন নিহত, আহত ২০
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পাস করেছিলেন অঙ্ক আর উর্দুতে। উর্দু পাকিস্তানের ভাষা, তার প্রিয় ভাষা। আর অঙ্ক হলো টাকা গোনায় লাগে। এজন্য এই দুটিতে পাস করেছে। আর কোনোটাতে পাস করতে পারেনি। জিয়া ছিল মেট্রিক পাস। আর খালেদা মেট্রিক ফেল। তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে এক্সপেল হয়ে পরে কোথায় থেকে যেন একটা সার্টিফিকেট নিয়েছে। কী পাস করেছে কেউ বলতে পারে না। এজন্য বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষিত হোক, উন্নত হোক সেটা এরা চায় না।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয় তাই এক কোটি মানুষকে মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ১৫ টাকা কেজিতে ৫০ লাখ মানুষকে চাল দিচ্ছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের ফ্রিতে চাল দিচ্ছি।’
বিরোধীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশটাকে আমরা নাকি ধ্বংস করে দিয়েছি। ১০৩টি প্রকল্প কি ধ্বংসের নমুনা? ওরা এত মিথ্যা বলে কেন? আসলে মিথ্যা বলা ওদের অভ্যাস।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের ক্ষমতা থাকা মানেই মানুষকে শোষণ করা, বঞ্চনা করা। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে উপহার দেয় উন্নয়ন। আমরা আজ শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে। আমরা নতুন নতুন স্কুল করেছি। ২৬ হাজার নতুন প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ করেছি। আজকে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। মানুষ এখন দেশে শান্তিতে বসবাস করছে। এখন আমাদের ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এক ইঞ্চি মাটিও পতিত থাকবে না। দেশের আনাচে কানাচে সব মাটিতে ফসল ফলাবো। নিজের খাবারের জন্য মাঠে কাজ করতে কোনো লজ্জা নেই। আমরা নিজেরা খাদ্যশস্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করবো। আমরা আর কারও কাছে হাত পাততে চাই না।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, মির্জা আজম, সদস্য মারুফা আখতার পপি, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তসহ অন্য নেতারা উপস্থিত আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে বিভাগীয় জনসভায় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন।