রোয়াংছড়িতে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে ৯০টি পরিবার

নুরুল কবির, বান্দরবান প্রতিনিধিঃ

রোয়াংছড়ি উপজেলায় সন্ত্রাসী গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে ৮ জন নিহতের ঘটনায় পুরো এলাকা থমথমে বিরাজ করছে। শনিবার দুপুরে ময়নতদন্তে শেষে ৮ জনের লাশ বম ত্রসোসিয়েশনে সভাপতি লাল জার বম এর কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এদিকে, রোয়াংছড়ি উপজেলা খামতাং পাড়ায় মোট ৯০ টি পরিবারের খেয়াং জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই পাড়াটি অর্ধেক পড়েছে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আর অর্ধেক পড়েছে রুমা উপজেলায়।

আরও পড়ুন… বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের দু’পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ৮

গতকাল ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ) দুই গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে ৮ জন নিহতের ঘটনায় পুরো এলাকা জনশুন্য হয়ে পড়েছে,  গ্রামবাসীরা যারা রুমা উপজেলায় পড়েছে ২০ পরিবার পুরুষ-৩১ জন, নারী-৩০ জন শিশু ৩ জন মোট ৬৪ জন সকালে পায়ে হেটে রুমা উপজেলা সদরে বিকেলে পৌঁছে বম সোশ্যাল কাউন্সিলে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে নারী, পুরুষ, শিশুসহ ১৭৪ জন রোয়াংছড়ি উপজেলায় রোয়াংছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যলয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই  ঘটনাস্থল  খামতাং পাড়া সাবেক পাড়া প্রধান (কারবারী) পাপড়ি খিয়াং বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে খাবার শেষে ঘুমোতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় পাড়ার পাশের বনের ভেতর থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পেয়ে প্রাণের ভয়ে পড়নে কাপড় দিয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এভাবে সারা রাত জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে রোয়াংছড়ি উপজেলায় পালিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান রুমা ও রোয়াংছড়ির দুই উপজেলার তিনটি গ্রাম খামতাং প্রাংসা পাড়া, পাইক্ষ্যং খামতাম পাড়া, খমং ক্ষ্যং পাড়া মিলে ৯০ টি পরিবার নিয়ে খেয়াং জনগোষ্ঠীর পাড়া। এর আমরা ৬৪ জনের অধিক রুমায় আশ্রয় নিয়েছি। আর বাকিরা নাকি রোয়াংছড়ি উপজেলায় আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে গেছেন বলে শুনেছি।

আরও পড়ুন… বান্দরবানে কলা গাছের আঁশে তৈরি হলো ‘কলাবতী’ শাড়ি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান সদর জোনের কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ফাহিম সাংবাদিকদের বলেন, খামতাং পাড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে চলেছে।  স্থানীয়  বাসিন্দারা কেএনএফের উৎপাতে থাকতে না পেরে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর রোয়াংছড়ি ক্যাম্পে চলে এসেছেন। বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী তাদের থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা  করেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হবে। নিরাপত্তা  পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় তাদের সেখানে  স্থানান্তর করা হবে।

রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, খামতাং পাড়া থেকে নারী, পুরুষ ও শিশু মিলে ১৭৪ জনকে রোয়াংছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে অন্য দিকে রুমা উপজেলায় ৬৪ জনকে বম সোশ্যাল কাউন্সিলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন… বান্দরবান সেনা জোনের সহযোগিতায় চিকিৎসা পেল পাহাড়ি পরিবার

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের সমন্বয়ে পালিয়ে আসা লোকজনকে খাবার, কাপড় যাবতীয় সাহায্য করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততোদিন তাদেরকে রোয়াংছড়ি হাই স্কুলে এবং রুমায় বম সোশ্যাল কাউন্সিলে আশ্রয়ে রাখা হবে।

ইবাংলা/এইচআর/৮ এপ্রিল ২০২৩

আতঙ্কেরোয়াংছড়ি