যাকাত হচ্ছে ধনীর সম্পদ থেকে আল্লাহপ্রদত্ত নিয়মে নির্দিষ্ট অংশ উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রদান করা। এটি আর্থিক ইবাদত। নামাজ, রোজার মতোই এ ইবাদত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। দাতার অবশিষ্ট সম্পদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে যাকাত। আল্লাহ তায়ালা কাউকে সম্পদশালী করেছেন। আবার কাউকে দরিদ্র করে সৃষ্টি করেছেন। আর ধনীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার হিসেবে প্রদান করেছেন যাকাতের বিধান।
আরও পড়ুন… ইসলামের অনুসারীদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে কি ধর্ম (ইসলাম) প্রযোজ্য
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পবিত্র কোরআনের ৮২ জায়গায় যাকাতের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা ইমান আনে, সৎ কাজ করে, নামাজ আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তাদের রবের নিকট রয়েছে এর প্রতিদান। তাদের কোনো ভয় নেই এবং চিন্তিতও হবে না। (সুরা বাকারা : ২৭৭)
দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় জাকাত ফরজ করা হয়। ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি যাকাত। ইসলাম সমাজকে যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত করতে চান। এ জন্য যাকাত আদায় করতে হয় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আল্লাহ কোরআনে বলেন, বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে। সঙ্গে নামাজ আদায় এবং যাকাত প্রদান করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এটাই সঠিক ধর্ম। (সুরা বাইয়িনা : ৫)
আরও পড়ুন… ৬ জিকিরের অবিশ্বাস্য ফজিলত
গরিবদের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করা যাকাতের মূল উদ্দেশ্য। যাকাত প্রদান করতে হবে নির্ধারিত খাতে। আল্লাহ তায়ালা যাকাত প্রদানের জন্য আটটি খাত নির্ধারণ করেছেন। নির্ধারিত খাত ছাড়া অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করলে তা আদায় হবে না।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। – সুরা তাওবা : ৬০
যাকাত কোনো সাধারণ দান-খয়রাত নয়। যাকাত দিতে হয় হিসাব করে। যাকে ইচ্ছা, যা ইচ্ছা এবং যে পরিমাণ ইচ্ছা জাকাত দেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট খাতেই যাকাত দিতে হয়। আর জাকাত আদায় না করলে শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন… আদনান ওকতার নামে সেই ‘ধর্মগুরুর’ ৮,৬৫৮ বছরের কারাদণ্ড
আল্লাহ বলেন, আল্লাহ অনুগ্রহে করে তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং এটি তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। (সুরা আলে ইমরান : ১৮০)
যাকাত অনুগ্রহ নয়। বরং ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার। এ অধিকার রক্ষার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব ধনীদের দিতে হবে। অন্যথায় পেতে হবে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
ইবাংলা/এইচআর/১৪ এপ্রিল ২০২৩