ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে আরেকটি অসাধ্য সাধন করলো বাংলাদেশ। যে ম্যাচে হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, সে ম্যাচে ৪ রানের জয় তুলে নিয়ে শেষ হাসি হেসেছে তামিম ইকবাল বাহিনী।
তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নাটকীয় এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
রোববার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবালের অর্ধশতক ও বাকিদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সব কটি উইকেট হারিয়ে ৪৮ দশমিক ৫ ওভারে ২৭৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসে শেষ ওভারের শেষ বলে গিয়ে ৪ রানের হার দেখেছে আইরিশরা।
তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আইরিশদের ২৭৫ রানে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবার্নির ব্যাটিং নৈপুণ্যে ২১ ওভারেই দলীয় একশ রান তুলে নেয় আইরিশরা। ৫৮ বলে ক্যারিয়ারের ২৭তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন স্টার্লিং।
আরও পড়ুন>> পেছাল স্থানীয় সরকার নির্বাচন
আইরিশ অধিনায়ক অন্যপ্রান্তে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। মৃত্যুঞ্জরের ব্যক্তিগত পঞ্চম ওভারের শেষ বলে চার হাঁকিয়ে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি। এরপর বোলিংয়ে এসে উড়তে থাকা আইরিশ অধিনায়কের উইকেট তুলে নেন এবাদত।
এবাদতের করা বলে পুল শটটিতে দারুণ টাইমিং হয়েছিল। কিন্তু ডিপ মিড-উইকেটে সরাসরি রনি তালুকদারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনে নামা এই ব্যাটার। এর মধ্য দিয়ে ভাঙে ১০৯ রানের জুটি। ৭৮ বলে ৫৩ রানে ফিরেন তিনি।
বালবার্নি আউট হলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন স্টার্লিং। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন চারে নামা হ্যারি টেক্টর। তবে ইনিংসের ৩২তম ওভারে মিরাজের করা অফ-স্টাম্পে বাড়তি বাউন্সের বল টেনে খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে অঞ্চলে মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে ধরা পড়েন স্টার্লিং। ৭৩ বলে ৬০ রানে থামেন এই ওপেনার।
এরপরই ক্রিজে থিতু হতে থাকেন টেক্টর। এবার তাকে ফেরাতে নতুন ফন্দি আটলেন টাইগার কাপ্তান। বোলিংয়ে টাইগারদের টপ-অর্ডার ব্যাটার শান্ত। এসেই ভেলকি দেখালেন তিনি। দলীয় ৪২তম ওভারে শান্তর বলে শর্ট লেংথের বলে পুল করেছিলেন টেক্টর। আর তার সেই পুল ওয়াইড লং অন থেকে ছুটে গিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন লিটন। আর এতে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা পান শান্ত। টাকারের সঙ্গে জুটি ভেঙে ৭৯ রানে ফিরেন এ টপ-অর্ডার ব্যাটার।
আরও পড়ুন>> ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন গভীর নিম্নচাপ
এরপর কার্টিস ক্যাম্ফার ও জর্জ ডকরেলের উইকেট তুলে নেন টাইগার সেরা অস্ত্র মোস্তাফিজুর। এর ফলে ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় আইরিশরা।
সিরিজের সমতায় আনার জন্য শেষ ১২ বলে আইরিশদের প্রয়োজন ছিল ২৪ রান। ক্রিজে ছিলেন দুই লোয়ার-অর্ডার ব্যাটার এডেয়ার ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন।
দলীয় ৪৯তম ওভারে অভিষিক্ত পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর হাতে বল তুলে দেন টাইগার কাপ্তান তামিম ইকবাল। ব্যক্তিগত অষ্টম ওভারে প্রথম দুই বলে এক রান দেন এ পেসার। এর পরের বলেই লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান এডেয়ার। পরের দুই বলে ২ রান ও বাউন্ডারি হাঁকান এ ব্যাটার। শেষ বলে এক রানে শেষ হয় এই অভিষিক্ত পেসারের ওভার।
শেষ ওভারের দায়িত্বে হাসান মাহমুদ। এসেই চমক দেখালেন এই পেসার। এসেই ব্রেক-থ্রু এনে দেন হাসান। ১০ বলে ২০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে ফিরেন এডেয়ার। পরের বলে আসে এক রান। এর পরের বলে আবারও আস্থার প্রতিদান দিলেন হাসান। ফিরালেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে। শেষ তিন বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯ রান। আর শেষ বলে প্রয়োজন দাঁড় ৬ রান। শেষ বলে আসে মাত্র ১ রান। এতেই নিশ্চিত হয় টাইগারদের জয়। এতে ২-০’তে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
এর আগে, ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তামিমের সঙ্গে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মত ওপেনিংয়ে নেমে ক্রিজে থিতুই হতে পারেননি রনি তালুকদার। পরপর ১২ ডট বল খেলে ১৩তম বলে চাপে পড়ে আগ্রাসী মেজাজেই বাউন্ডারি হাঁকান অভিষিক্ত এ ওপেনার। তবে পরের বলেই মার্ক এডেয়ারের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই ব্যাটার।
তিনে নাজমুল হোসেন শান্ত, চারে লিটন দাস ও মিডল-অর্ডারে মুশফিকুর ও মেহেদী মিরাজরা ভালোই শুরু করেছিলেন। তবে তাদের কেউই বড় স্কোরের দিকে অগ্রসর হতে পারেননি। কেবল তামিমই ফিফটির দেখা পান, আর উইকেট ছুড়ে এসে সেঞ্চুরির সুযোগ মিস করে ৬ বাউন্ডারিতে ৬৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দেশসেরা এই ওপেনার।
আরও পড়ুন>> তুরস্কে নির্বাচন: এগিয়ে এরদোয়ান
রনির অভিষেক ব্যর্থতায় শান্ত ও লিটনকে নিয়ে যথাক্রমে ৪৯ ও ৭০ রানের জুটি গড়েন তামিম। তবে তাদের বিদায়ে বাকি দুই মিডল-অর্ডার তাওহিদ কিংবা মুশফিকুরের সঙ্গে খুব একটা কেমিস্ট্রি জমেনি অধিনায়কের। আর টাইগারদের কাপ্তান ফেরার পরপরই বড় স্কোরের পথে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
যদিও ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আশা জাগিয়েছিলেন মুশফিক ও মিরাজ। এই জুটির অবদান ৭৫ রান। এরপর জুটি ভাঙলে আর কেউই ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতেই ২৭৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগার শিবির। শেষ দিকে ২১ বলে ১৩ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
আইরিশদের হয়ে মার্ক এডেয়ার চারটি, জর্জ ডকরেল ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন দুটি করে এবং ক্রেইগ ইয়াং একটি উইকেট শিকার করেছেন। আর ৯ ওভারে ৬৫ রান খরচায় উইকেট শূন্যই ছিলেন আইপিএলে আইরিশদের একমাত্র প্রতিনিধি জশ লিটল।
ইবাংলা/এসআরএস