কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন ১০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

ঘূর্ণিঝড় ’মোখা’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন এবং উপকূলীয় টেকনাফ এলাকার। সরকারি হিসাবেই কক্সবাজারে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি ঘর-বাড়ি। উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা। সেন্টমার্টিনে ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইবাংলা ডেস্ক নিউজ: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ’মোখা’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন এবং উপকূলীয় টেকনাফ এলাকার। সরকারি হিসাবেই কক্সবাজারে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি ঘর-বাড়ি। উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা।

সেন্টমার্টিনে ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় সাগরের জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় সেন্টমার্টিনের একাংশ। সেখানে ঘরবাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে পড়ে।

আরও পড়ুন>>>ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন গভীর নিম্নচাপ

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যা ৬টায় জানান, কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা জানান, বিশাল অবয়বের সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ প্রলয়ংকরী তীব্রতা নিয়ে উপকূলভাগে উঠে আসার সময় সাগরে ছিল ভাটা। ফলে তার সাগর মন্থনের তেজ কমে যায়। জলোচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণাবর্তের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

এরইমধ্যে ‘মোখা’র কেন্দ্র বাঁক খেয়ে রাখাইন রাজ্যের সিত্তে বন্দর দিয়ে ডাঙ্গায় ওঠে। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত ছিল মিয়ানমারে। সেখানে ১০ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাস এবং ২০৯ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ের তান্ডব চালিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে মোখা। রাখাইন রাজ্যে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাত ৯ টার পরে মোখা মিয়ানমারে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

আবহাওয়া দফতর জানায়, সেন্ট মার্টিনে ১৪৭ কিলোমিটার বেগে ‘আঘাত’ হানে ‘মোখা’। দেশের অন্য উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে এর বিশেষ প্রভাব পড়েনি। তবে সামান্য বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সুন্দরবন এলাকায়ও তেমন প্রভাব পড়েনি।

আরও পড়ুন>>>মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিন ও রাখাইন লন্ডভন্ড, নিহত ৫

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো.আবদুর রহমান বলেন, ‘মোখা’ কক্সবাজার অতিক্রম করতে ৯ ঘণ্টা সময় নিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে অতিক্রম শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ মিয়ানমারের সিত্তে অঞ্চল দিয়ে যায়। এর ফলে শুরু থেকে ‘মোখা’ নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল তা কেটে যায়।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ঝড়ের তীব্রতায় উড়ে গেছে ঘরবাড়ির চালা। উপড়ে গেছে গাছগাছালি। গাছ পড়ে দুইজন নিহতের খবর প্রচার পেলেও সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গাছ পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান।

এদিকে ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের তান্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাড়ি-ঘর। বাতাসের তীব্রতায় দু’শতাধিক কাঁচাবাড়ি উপড়ে গেছে। চালা উড়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো দেড় শতাধিক ঘর, এমনটি দাবি করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমেদ।

আরও পড়ুন>>>দুর্বল হয়েছে মোখা, বাতাসের গতি কমে ১৩০

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ঘোষণার পর হতে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে বাণিজ্যিক কোন পণ্য আনা নেয়া হয়নি। তাই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দ্বীপে খাদ্য ও চিকিত্সা সংকট দেখা দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে উপজেলা প্রশাসন বলেছে, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কয়েকদিন সময় লাগবে। আগে থেকে প্রস্তুতি থাকায় খাদ্য সংকট হবে না।

সেন্টমার্টিনের মতো লণ্ডভণ্ড না হলেও, টেকনাফ সদর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, শাহপরীরদ্বীপ উপকূল প্লাবিত হয়েছে। ভেঙেছে গাছগাছালি। এতে অনেক সড়ক-উপসড়কে চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

‘মোখা’র প্রভাবে বাতাসের তীব্রতায় উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় ৪ শতাধিক বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন লার্নিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। নষ্ট হওয়া ঘরগুলো সংস্কারের জন্য ইউএন এজেন্সিগুলো কাজ করছে।

আরও পড়ুন>>>সোমবারের সব বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত

এদিকে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও অন্য উপকূলে ‘মোখা’র প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে কিছু কিছু এলাকায় বাতাসে গাছের ডাল-পালা ভেঙ্গে পড়েছে। এতে আহত বেশ কয়েকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেগে সেন্টমার্টিন হয়ে মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবত্ আছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টমার্টিন জোনের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপ-পরিদর্শক মাহফুজ বলেন, ‘মোখা’র প্রভাবে তীব্র দমকা ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা আগে থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করায় জানমালের ক্ষতি রোধ সম্ভব হয়েছে। তবে অনেক বাড়ি-ঘর ক্ষতি হয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছে।

আরও পড়ুন>>>‘মোখা’য় লণ্ডভণ্ড সেন্টমার্টিন, নারীসহ নিহত ২

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এখন বাতাসের প্রকোপ কমে এসেছে। সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের সাবরাংসহ কিছু এলাকায় গাছ ও ছোট ছোট ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে ছিল বলে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এখন আমরা মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, মহেশখালীতে বাতাসের তিব্রতা বেশি হলেও জলোচ্ছ্বাস ছিল না। ফলে বড়ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক এবং দুই হাজার কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। কোথাও কোন খাদ্য সংকট হবে না। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কিছুটা সময় লাগবে।

আরও পড়ুন>>>ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা উত্তাল

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘মোখা’র তীব্রতাতেও বেশ কিছু সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছিল। আমরা তাদের দেখভাল ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট রেখেছিলাম। দুর্যোগ এড়াতে পর্যটন এলাকাতেও ৬৮টি হোটেলকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে সেখানে দুর্গতদের রাখা হয়। জেলার ৬৬৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নেয়।

সবাইকে সাধ্যমতো খাবার সংস্থান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সেন্টমার্টিন নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা আজকে (রবিবার) রাতও অবজারভেশনে থাকবো। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় হয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। সূত্র : ইত্তেফাক অনলাইন

ইবাংলা/ বায়েজীদ

১০ হাজারঘরবাড়িবিধ্বস্ত