অবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পেলো ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনারোধী টিকা কোভ্যাক্সিন। ফলে এখন থেকে বিদেশযাত্রায় অনেকটা সুবিধা পাবেন এই টিকাগ্রহীতারা। অব্যবহৃত অবস্থায় এই টিকার ১ বছর পর্যন্ত গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। দেশটির ওষুধবিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) সম্প্রতি এ বিষয়ক একটি সনদপত্র প্রদান করেছে।
এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক। শনিবারের ওই বিবৃতিতে ভারত বায়োটেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা টিকার মেয়াদবিষয়ক তথ্যসমূহ সিডেএসসিও বরাবর জমা দিয়েছিলাম। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সিডিএসসিও এই সনদ দিয়েছে। সিডিএসসিওর সনদ অনুযায়ী, টিকা প্রস্তুতের দিন থেকে পরবর্তী ১২ মাস পর্যন্ত মেয়াদ ও গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে কোভ্যাক্সিনের।’
আরও পড়ুন : ইথিওপিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি
বর্তমানে বাজারে যেসব করোনা টিকা পাওয়া যায়, সেসবের অধিকাংশেরই মেয়াদ ৬ মাস। অর্থাৎ, প্রস্তুতের দিন থেকে ৬ মাসের মধ্যে ব্যবহার না করা হলে নষ্ট হয়ে যায় ওই টিকার ডোজ। এ ছাড়া, ফাইজার-মডার্নার করোনা টিকা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয়ে বিশেষ তাপমাত্রার। সেই তাপমাত্রায় রাখা না হলে এমনিতেই টিকার প্রতিরোধী গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
অন্যদিকে, সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই কোভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। উৎপাদনের প্রথম দিকে অবশ্য অন্যান্য টিকার মতো ৬ মাস মেয়াদ ছিল কোভ্যাক্সিনেরও, তবে চলতি বছর গোড়ার দিকে টিকার মেয়াদ বাড়ানোতে মনযোগ দেয় ভারত বায়োটেক।
ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো যদি তাদের উৎপাদিত টিকার মেয়াদ বাড়ায়, সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে টিকার অপচয় অনেকাংশে কমে আসবে।
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন বাজারে আনে ২০২০ সালের শেষের দিকে। এখন পর্যন্ত এটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত একমাত্র করোনা টিকা। এই টিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে মৃত ও বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করোনাভাইরাস দিয়ে। করোনাভাইরাসের যে নমুনাটি এই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে-ভারত বায়োটেককে তা সরবরাহ করেছে দেশটির জীবাণুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
কোভ্যক্সিন দুই ডোজের করোনা টিকা। এটি সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। গত ৩ জুলাই কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ করেছে ভারত বায়োটেক। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর কোভ্যাক্সিন।
আরও পড়ুন : জিনস পরা তরুণীকে ‘চরিত্রহীন’ বলায় ঝড়
গত জুলাই মাসে কোভ্যাক্সিনের পক্ষে বৈশ্বিক ছাড়পত্র পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন করেছিল ভারত বায়োটেক; কিন্তু সম্প্রতি সংস্থার পক্ষ থেকে কোম্পানিকে জানানো হয়েছে, ছাড়পত্রের জন্য আরও কিছু তথ্য প্রয়োজন।
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কোভ্যাক্সিন ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতীয় সংস্কার কোভিশিল্ড।
ভারত ছাড়াও আরও যেসব দেশ তাদের টিকাদান কর্মসূচিতে এই টিকাটি ব্যবহার করছে সেগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, গায়ানা, ইরান, মরিশাস, মেক্সিকো, নেপাল, প্যারাগুয়ে, ফিলিপাইন, জিম্বাবুয়ে, ওমান, শ্রীলঙ্কা, এস্তোনিয়া ও গ্রিস।
ইবাংলা/এএমখান/০৩ নভেম্বর, ২০২১