- বান্দরবানে লামা ও আলীকদমের পাহাড়ে কাউন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে কাউন চাষের উদ্যোগ নিলে এক দিকে যেমন শতশত কৃষক পরিবার স্বাবলম্বী হবে। অপর দিকে পাহাড়ে অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, পাহাড়ি ঢালু জমিতে জুমে ধান চাষের সঙ্গে মিশ্র শস্য হিসেবে সাধারণত জুমিয়া কৃষকরা কাউন চাষ করে থাকে। কাউন স্থানীয়দের কাছে ‘কৈন’ নামে পরিচিত। পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের কাছে অতিথি আপ্যায়নে, সামাজিক উৎসব-পার্বণে কাউনের পায়েসের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। শুধু লামা,আলীকদম নয়, তিন পার্বত্য জেলাসহ সারাদেশে কাউন একটি সুস্বাদু খাবার। বিস্কুট তৈরিতেও কাউন ব্যবহৃত হয়। দানা জাতীয় ফসলের মধ্যে কাউনের কদর পাহাড়ে ও সমতলে সর্বত্রই সমান জনপ্রিয়। এটি পুষ্টির চাহিদা পূরণেও সহায়ক। কাউন থেকে আমিষ ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ হয় বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
জুম চাষিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ে বৈশাখ মাসে জুমে কাউন বীজ ছিটানো হয়। বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ার পর কাউন-বীজ গজিয়ে ওঠে। কাউন একবীজপত্রী উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা সরষে দানার মতো। তবে জুমিয়াদের কাছে এটি এক প্রকার ধান হিসেবে পরিচিত। কাউন গাছ সাধারণত ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কাউন গাছ মাঝারি লম্বা, সবুজ রঙের পাতা, কাণ্ড শক্ত বিধায় সহজে নুয়ে পড়ে না। এর শীষ লম্বা, মোটা ও লোমশ প্রকৃতির হয়।
- কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সবধরনের মাটিতেই কাউনের আবাদ হয়। পানি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল ফলন হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা হয়। তবে জুম চাষিরা সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢালু পাহাড়ে জুম চাষের সঙ্গে কাউনের বীজ ছিটিয়ে আবাদ করে থাকেন।
আলীকদমের জুমচাষি রুপসেন তঞ্চঙ্গ্যা এবং লামা এলাকার জুমচাষি কাইফু মুরুং জানান, নিজেদের চাহিদার কারণেই জুমে তারা কাউন চাষ করে থাকেন। নিজেদের চাহিদার অতিরিক্ত হলে তা বাজারে বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি কাউন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।
লামা উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, লামায় কি পরিমাণ জমিতে কাউন চাষ হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে জুমিয়া কৃষকেরা জুম চাষের সঙ্গে কাউন চাষ করে থাকেন।
আলীকদমের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা জানান, আলীকদমে ৫ হেক্টর জমিতে কাউন চাষ হয়েছে। তবে জুম চাষিদের ধারণা এর পরিমাণ আরও বেশি।
ইবাংলা/এইচ/০৪ নভেম্বর, ২০২১