বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্রকরে চিংড়ি মাছের ফাঁদ চাঁই তৈরির পেশা ধরে রেখেছে। গ্রামে চলছে বাঁশের শলা দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে পরিচিত চাঁই তৈরির কাজ। এ শিল্পের বেশিরভাগ কারিগরই হলেন নারী। সংসার সামলিয়ে ঘরে বসে এসব কাজের মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা পালন করছেন।
একটি মুলি বাঁশ দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়, আর একটি মোড়ল বাঁশ দিয়ে কুঁচে ধরার চাঁই হয় ২৫টি। পাঁচ ধরনের চাঁই বানান তারা। নদী-নালা, খাল-বিল হাওরের সুবিধা মতো স্থানে রেখে মাছ শিকার করা হয়।
পানিতে মাছ চলাচল করতে এক সময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। চাঁই বানানোর প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। মাছ কিংবা কুঁচে ধরার জন্য বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা তুলে এগুলো রোদে শুকিয়ে তারপর শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ।
আরও পড়ুন…পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ২৩ বস্তা টাকা, চলছে গণনা
জেলার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নদী-নালা, খাল-বিল হাওরের সুবিধা মতো স্থানে রেখে মাছ শিকার করা হয়। পানিতে মাছ চলাচল করার সময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না।
চাঁই বানানোর প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা তুলে এগুলো রোদে শুকিয়ে তারপর শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ। মাছ ধরার চাঁই বানিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছেন পুরুষের পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন ধাপের পর একটি পরিপূর্ণ চাঁই তৈরি হয়।
স্থানীয় ও আশপাশের হাটের দিনগুলোতে জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায় এসব চাঁই। চুলায় ভাত বসিয়ে নারীরা পিঁড়িতে বসেই করে চাঁইয়ের বিভিন্ন অংশ তৈরির কাজ। প্রবীণ নারীরা পানের কৌটা পাশে রেখে উঠোনে বসে এ কাজ করেন। ছোট সাইজের চাঁই বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকা।
আরও পড়ুন…কোরআন পোড়ানো বন্ধ করতে পুলিশের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে সুইডেন
মাঝারি সাইজের ২৫০-৩০০ টাকা ও বড় সাইজের বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বর্তমানে এসব কাজে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছে। বছরের ৬ মাস গ্রামের প্রতিটি পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে।
তবে এ পেশায় আগের মতো লাভ না থাকলেও বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছে ওই পরিবারগুলো। স্কুলপড়ুয়া ছেলে মেয়েরাও বাবা-মাকে এ শিল্পে সহযোগিতা করে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কলাগাঁত্ত গ্রামের সবায় চাঁই বানাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ গ্রামের সারা বছর চাঁই তৈরি করা হলেও বর্ষা মৌসুমে চাঁইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন…৩২৭ দিন পর মাঠে ফিরছেন ম্যাচসেরা বুমরাহ
ফলে তাদের ওই সময়ে কাজের চাপও বৃদ্ধি পায়। চাঁই শুধু কুমিল্লায় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চাঁই তৈরির কারিগররা।
চাঁইয়ের কারিগর কামরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, চাঁই তৈরির কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে সংসারে স¦চ্ছলতায় ভূমিকা রাখছেন নারীরা। পুরো বছরই এ গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে।
মাছ ধরার চাঁই বানিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছেন নারীরা চাঁই তৈরির কারিগর সাইফুল ইসলাম ও বারেক মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে চাঁই এর কদর বেড়ে যায়।
কুমিল্লা ছাড়াও পটুয়াখালী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার মানুষ অর্ডার দিয়ে এখানে চাঁই কিনতে আসেন। নির্দিষ্ট সময়ে চাঁই তৈরির কাজ শেষ হলে পরে তারা এসে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন…ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ৪৫০, হাসপাতালে ১৫৬৫
মরিয়ম বেগম বাসসকে বলেন, চাঁই তৈরীর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভও আগের চেয়ে একটু কম হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাসসকে বলেন, কলাগাঁও গ্রামের প্রায় সকলেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওই গ্রামের প্রায় সকল মানুষ চাঁই বানিয়ে এখন স্বাবলম্বী বলে জানান তিনি।