আজকাল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দশ বছরের কম বয়সী শিশুরাই এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। এবং পরিচিত জনের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হয়।
সতর্ক না হলে এ ধরনের ঘটনায় শিশুর শৈশব বিভীষিকাময় হয়ে উঠতে পারে। শিশুর শৈশব কে সুরক্ষিত করতে অভিভাবক হিসেবে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তাকে ধারণা দিন গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ সম্পর্কে এবং সে সময় কি করা উচিত জানান সে বিষয়টি ও।
ছোট বয়স থেকেই বুঝিয়ে বলুন: শিশুর সঙ্গে ভাল স্পর্শের এবং খারাপ স্পর্শের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। যাতে খুব দ্রুত সে স্পর্শকাতর এ বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পায়।
জড়তা কাটিয়ে উঠুন : আমরা অনেকেই শিশুর সঙ্গে এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করি, কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা শুরু হওয়া উচিত বাড়ি থেকেই। তাই সব দ্বিধা দূর করে সহজ ও সাবলিল ভাবে শিশুকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। খেলার মধ্য দিয়েই শিশুকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানানো সম্ভব। সহজ ভাষায় গল্পচ্ছলেই ওকে বোঝান ‘গুড টাচ’ ‘ব্যাড টাচ’ কি। এসময় শিশুর কোন কৌতুহলি প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন না। যতটুকু সম্ভব যথাযথ শব্দ ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর দিন।
তাকে শরীরের সীমানা সম্পর্কে ধারনা দিন: শিশুকে বলুন, সাধারনত আমরা শরীরের যে সমস্ত অংশগুলো ঢেকে রাখি সেগুলো আমাদের শরীরের একান্ত অংশ। আরও সহজ ভাবে বোঝাতে চাইলে সুইম স্যুট রুলর্স অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
তাকে জানান, সুইম স্যুট এ ঢাকা অংশে কেউ স্পর্শ করতে পারে না। এখানে স্পর্শের অধিকার করো নেই। এবং শুধু গোসল এবং তাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সময় মা,বাবা স্পর্শ করতে পারবে। এ ছাড়া বাবা মায়ের উপস্থিতিতে ডাক্তার চিকিৎসার প্রয়োজনে স্পর্শ করতে পারবে।
দুটি স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে বলুন: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুকে আদরের ছলেই শিশুর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে। ফলে শিশুর পক্ষে গুড টাচ এবং ব্যাড টাচের পার্থক্য বোঝা কঠিন হয়ে পরে। সেক্ষেত্রে শিশুকে এভাবে বোঝানো যেতে পারে-
গুড টাচ হলো সেই স্পর্শ যাতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এবং এ ধরনের স্পর্শের মাধ্যমে আদর ভালোবাসার প্রকাশ পায়। আর ব্যাড টাচ হলো- যে স্পর্শে তুমি অস্বস্তিবোধ কর , ব্যাথা পাও, বাধা দিতে চাও। যদি তোমার অনুমতি ছাড়া কেউ তোমার শরীরের একান্ত অংশে স্পর্শ করে। এছাড়া কেউ যদি তোমাকে স্পর্শ করে এবং এ কথা কাউকে না জানানোর অনুরোধ করে , এটিও তাহলে ব্যাড টাচ।
শিশুর বন্ধু হোন: এ ধরনের আচরনের শিকার শিশু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে ঘটনা সম্পর্কে বলে না বা নীরবে মেনে নেয়। কারন বাবা মায়ের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক তৈরি হয়না। আবার শিশুর কথা বিশ্বাস না করা এবং গুরুত্ব না দেওয়া ও একটি কারন। তাই শিশুর সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। শিশু সারাদিন কি কি করেছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে আশ্বস্ত করুন ,তার প্রতি আপনি সচেতন এবং নিশ্চিত করুন শিশু যেন আপনার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করে।
শিশুর করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দিন: অভিভাবক হিসেবে শিশুকে শুধু সতর্ক করেই আপনার কাজ শেষ নয়। অপ্রিতীকর পরিস্থিতিতে শিশুর করণীয় সম্পর্কে ও শিক্ষা দিতে হবে। তাকে বলুন- কারো ছোয়া খারাপ লাগলে প্রতিবাদ করতে। ঘটনাস্থল থেকে তাড়াতাড়ি সরে আসতে, এবং সে ব্যাক্তির সামনে পরবর্তীতে একা যাওয়া থেকে বিরত থাকতে। এমন কিছু ঘটলে বিশ্বস্ত কারো কাছে ঘটনা খুলে বলতে এবং প্রযোজনে চিৎকার করতে। যে এমন আচরন করেছে তাকে ভয় না পেতে।
ইবাংলা/টিপি/ ৬ নভেম্বর, ২০২১